রাজু চৌধুরী:[২] ঢাকা থেকে বেড়াতে এসে গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন আইয়ুব আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় দায়েরকৃত মামলার কোনো প্রকার ক্লু বিহীন এ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে টানা তিনদিনের চেষ্টায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।
[৩] মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডবলমুরিং থানায় ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক জানান, প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলীকে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আইয়ুব আলীর ব্যাগ, মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। ছুরিকাঘাতে আহত আইয়ুব আলী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। গ্রেফতার পাঁচজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। তারা চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। প্রাইভেটকার চালক আইয়ুব আলী। বিফ্রিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উপ-কমিশনার (ডিবি-বন্দর) এসএম মোস্তাইন হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির, সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) শ্রীমা চাকমা ও ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন। গ্রেফতারকৃ্ত পাঁচ ছিনতাইকারী হলো, পটুয়াখালী জেলার দুমকি থানাধীন আংগারিয়া এলাকার মো. রফিকের ছেলে মো. আল আমিন (২২), চট্টগ্রাম সদরঘাট থানাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার মো. ইউছুফের ছেলে মো. রাব্বী (২২), কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন মো. হানিফের ছেলে মো. সোহেল (২৫), কুমিল্লা জেলার তিতাস থানাধীন রঘুনাথপুর এলাকার মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাবু প্রকাশ ছোট বাবু প্রকাশ শাকিল (২০) ও লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানাধীন পেয়ারাপুর এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনি (২০)।
[৪] ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা পিকআপ ভাড়া নিয়ে নগরে ঘুরে বেড়ায়। পথচারী, রিকশা যাত্রী, সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীর পথরোধ করে ছিনতাই করে। আইয়ুব আলী যখন রিকশা করে যাচ্ছিলেন তখন রিকশার সামনে পিকআপ রেখে গতিরোধ করে। পরে তার ব্যাগ, মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা। ছিনতাইকারীরা মাদক সেবন করে, মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করে।
[৫] তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা একজন চালক, দুইজন সামনে বসা থাকে এবং তিনজন পিকআপে উপরে থাকেন। সুযোগ পেয়েই গাড়ি থেকে ছিনতাই করেন। পথে তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজেদের ফিশারিঘাটের শ্রমিক পরিচয় দিয়ে থাকে। তারা প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি, নগরের সদরঘাট থানায় মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে চারটি, মো. সোহেলের বিরুদ্ধে চারটি, মো. বাবু প্রকাশ ছোট বাবু প্রকাশ শাকিলের বিরুদ্ধে দুইটি ও মো. কামাল হোসেন প্রকাশ রনির বিরুদ্ধে দুইটি মামলা রয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার পাঁচ ছিনতাইকারীর মধ্যে চার ছিনতাইকারী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
[৬] এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা এখন পর্যন্ত অন্তত দুইশ ছিনতাই করেছে বলে স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তারা নগরের সার্সন রোড, কোতোয়ালী, চৌমুহনীসহ একাধিক জায়গায় ছিনতাই করে। অর্নব বড়ুয়া বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা আইয়ুব আলীর কাছ থেকে যে মোবাইল ছিনতাই করেছে তা আলী আকবরের নামে একজন চোরাই মোবাইল ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছে বলে স্বীকার করেছে তারা।
[৭] তিনি বলেন, নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি করা ও ছিনতাই করা মোবাইল ফোন আলী আকবর কিনে নেন। পরে আলী আকবর এসব মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করে বিক্রি করেন। পুলিশ আলী আকবরকে খুঁজছে বলেও জানান অর্নব।