জাহিদ রেজা নূর: গত মাস পর্যন্ত প্রথম আলোতে চাকরি করতাম বলে চারটি পত্রিকা পেতাম। আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমি বুঝতে পারছিলাম, পত্রিকা আর আমার দুটো পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে। আগস্ট মাস শুরু হলে দেখলাম, প্রথম আলো আর দেশ রূপান্তর পত্রিকা দুটো দেওয়া হচ্ছে। কেন এখনো আমার বাড়িতে পত্রিকা দিচ্ছে হকার, সেটা বুঝতে পারিনি। তাই প্রথম আলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালাম, মানবসম্পদ বিভাগ হয়তোবা এ বিষয়টির দিকে নজর দেয়নি। আমি পত্রিকা রাখতে চাই না। এরপরও দেখি প্রতিদিন পত্রিকা আসছে। একবার বোকার মতো ভাবলাম, কর্তৃপক্ষ হয়তোবা আমার ২১ বছরের চাকরি জীবনের প্রতি সম্মান জানিয়ে পত্রিকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনা সে রকম ছিল না। থাকার কথাও নয়। এটা ছিল একজন সাবেক কর্মচারীর অকারণ কল্পনা।
হকারকে ফোন করেছিলাম যখন, তখন সে বললো, দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা করেছি বলে আমার বাড়িতে পত্রিকা আসা উচিত। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সে আমার জন্য দুটো পত্রিকা বরাদ্দ করেছে। অর্থাৎ, পত্রিকা দুটির বিল আমাকেই দিতে হবে। আমি দেবো। ওর কথা আমার ভালো লেগেছে। যদিও বহুদিন হলো, ছাপা পত্রিকায় কাক্সিক্ষত সাংবাদিকতা দেখি না, তারপরও ক্ষয়িষ্ণু প্রিন্ট পত্রিকার কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে, সেটা ভেবে ভালো লাগছে।
আমার কোনো কোনো বন্ধুর মতো আমি প্রিন্ট পত্রিকার গুনগান গাইবো না। ফেসবুকে পত্রিকাসহ তাদের দেওয়া পোস্টগুলোকে মেকি এবং হাস্যকর বলে মনে হয় আমার কাছে। পত্রিকাগুলোর হৃদয়ে যে করুণ সুর বেজে উঠেছে, তাতে পত্রিকা বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাফাই গাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমি বরং কিছুদিন পত্রিকা নেবো। তারপর কী করবো জানি না। তবে দীর্ঘদিনের একটা ঐতিহ্যের অবসান হতে চলেছে, সাংবাদিক সম্প্রদায় নির্জীব নির্বিষ হয়ে কালাতিপাত করছে, এই সমস্তটাই আমার জন্য খুবই মর্মস্পর্শী ও দুঃখজনক। ফেসবুক থেকে