তাসাদ্দুক দুলু : ‘২৪ ঘণ্টা অক্সিজেনের উপর থাকতে হয়। অসুখ ছিলো ফুসফুসে। করোনা ফুসফুসে আঘাত করে...।’ এই কথাগুলো বলছিলেন এপ্রিল ২০২০ তারিখে স্যার। এটাই আমার সাথে শেষ কথা। মূলত তাঁর শরীরের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যই টেলিফোন করা। দীর্ঘ কথার বেশির ভাগ হলো ছবি আঁকছি কিনা এবং ছবিগুলো ম্যসেঞ্জারে দেওয়ার জন্য। দিয়েছিলাম এবং উত্তর দিয়েছেন যথাসময়ে। আমার সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর থেকে এবং প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিলো স্যারের সাথে। চট্টগ্রামে আমার প্রদর্শনীর উদ্ভোধনীতে আমার একটি সাদা-কালো ছবি দেখে বললেন, তোমার যাত্রা শুরু এখান থেকে। সেই সাদাকালো থেকে অনেকটা পরিবর্তন এখন। যতোদিন চট্টগ্রামে ছিলেন স্যার, মাঝে মধ্যে ডাক পরতো আমার আড্ডা দেওয়ার জন্য।
বাসায় যাওয়া তিনি পছন্দ করতেন না। আমার জানামতে, এই রকম অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু কেন জানি আমার তা হয়নি কখনো। অনেক গল্প হয়েছে স্যারের সাথে। শিক্ষকতা করবো এই অভিপ্রায় আমার মধ্যে ছিলো। এই জন্য আমাকে পিএইচডি করার জন্য একটা উৎসাহ দিয়েছিলেন। স্যার আমার বিষয়ও ঠিক করে দিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা এবং মারমা বা মুরংদের চারু ও কারু শিল্প। একদিন আমাকে নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘরে নিয়ে গেলেন। দুপুর পর্যন্ত আমাকে নিয়ে পুরো যাদুঘর ঘুরিয়েছেন এবং কার কাছে পিএইচডি করবো তাও ঠিক করে রেখেছেন এবং আমাকে পাঠালেন। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক স্যারের কাছে। প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক আমাকে বললেন, চট্টগ্রামের লোক ঢাকায় এসে কাজ করতে কষ্ট হবে। আবার চট্টগ্রাম এসে বশীর স্যারকে বললাম। স্যার আবার আমাকে পাঠালো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহমেদ ফজলে হাসান স্যারের কাছে। তিনি সাদরে গ্রহণ করলেন এবং আমার কী কী করতে হবে, সবই করেই দিলেন। কিছু দিন পর ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু কোনো এক কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে গেলো। বলে রাখা ভালো, আমার পেপারটা স্যার সংশোধনও করে দিয়েছিলেন, পুরো লাইন ধরে স্যার কাজ করেছিলেন। যা আমার কাছে সংরক্ষণ করা আছে। একটি কথা সবসময় বলতেন, যতোদিন বাঁচো ছবি আঁকবা। মনে থাকবে স্যার। আপনিও ভালো থাকেন যেখানেই থাকুন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :