শর্বাণী দত্ত: একেকটা ঘনঘোর মেঘলা দুপুরে আর নদীর মতো শান্ত সন্ধেবেলায় গত জন্মের স্মৃৃতির মতো আমার কলকাতার কথা মনে পড়ে যায়। জাতিস্মরের মতো আমি কম্পিত বুকে দুটো ছন্নছাড়া পৃথিবীতে দুই পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকি। একটা শহর ছেড়ে এলে, নিজের একটা অংশও কি ওখানে ফেলে আসতে হয়? আমার মনে বলে-হ্যাঁ, হয়।
ওই শহরটার তো পাগলামোই আলাদা। মাছ আর মার্ক্স নিয়ে এমন অবসেশন হয়তো পৃথিবীর আর কোনো শহরতলীর গল্পে নেই। ইনকিলাব আর বিপ্লবের এমন মশাল আমি কোথাও জ¦লতে দেখিনি এর আগে। আমি এর আগে কোনোদিন বন্ধুকে কমরেড ডেকে বিপন্ন-বিস্ময়ের দিনগুলোকে সুন্দর বানাতে শিখিনি। কলকাতা শহরের পুরো আকাশটাই যেন সামিয়ানা। সেই আকাশের নিচে কনকনে ঠাণ্ডা জলের মহাস্রোতী গঙ্গা বয়ে যায়। মেট্রো আর বনগাঁ লোকালের ভিড়ে প্রায়ই দুজন বয়স্ক কাকুর তর্কাতর্কি শুরু হয়। সেই শামিয়ানার তলায় সেন্ট্রালে বিবেকানন্দের প্রেসিডেন্সি। নতুন-পুরনো বইয়ের গন্ধে শহরের ধোঁয়ার দূষণের গন্ধও কিছুক্ষণ ঢাকা পড়ে যায়।
আর কফি হাউজের ‘কোয়ালিটি হারিয়ে যাওয়া কফি?’ আমার নিজের বড্ড প্রিয় জায়গা, সেই ভিক্টোরিয়ান গোথিক স্থাপত্যের গোটা এসপ্লানেড। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি, ভুল প্রেমের হাত ধরে রাস্তা পার হওয়া ট্রাম এদিকে ফেরার আগেই, আর ওই তো রাস্তার ফুচকা। রোল চাউমিন খেয়ে ‘ঘ্যামা’ বলে ওঠা বন্ধুগুলো। একটা শহর, একটা জীবন্তÍ সভ্যতা। যে শহরে একবার মাও বলে ডাকলে সমস্ত কারফিউ ভেঙে যেতে পারে নিমেষে, সে এক ভীষণ পাগলামো- একটু অলীকই বটে, তবুু তো এই শহর জাদুর শহর। নবারুণের শহর। মৃত্যু উপত্যকা থেকে জেগে ওঠা প্রাণের শহর। না,আমি জাতিস্মর থেকে খুব আলাদা নই। ফেসবুক থেকে