ডেস্ক রিপোর্ট : খাল-বিল ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাভারে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বসতবাড়ি, বাজার, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও পুকুর।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় সাভারে প্লাবিত হয়েছে অর্ধ শতাধিক গ্রাম। ফলে পানিবন্দী অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের কয়েক লাখ মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকায় নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
অন্যদিকে শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও শ্রমিক কলোনিসহ রাস্তাঘাটে কলকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানিতে চলাচল করতে গিয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। দুর্ভোগের জন্য কলকারখানার বর্জ্য ও শিল্পাঞ্চলে নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন না থাকা এবং যত্রতত্র বর্জ্য ফেলাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারের তুরাগ নদ, ধলেশ্বরী নদী, বুড়িগঙ্গা নদী, বংশী নদী, গাজীখালী নদী ও কাকিলাজানি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বনগাঁও, ভাকুর্তা, তেঁতুলঝোরা, কাউনদিয়া, স্বনির্ভর ধামসোনা ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঢাকার উত্তরাঞ্চল বেষ্টিত তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সাভার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বন্যায় পানিবন্দী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। করোনা মহামারির পর বন্যার কারণে উপার্জন বন্ধসহ বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় কোনোমতে দিনাতিপাত করলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে মিলছে না কোন ত্রাণ সহায়তা।
সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় বাড়ি ও গরুর খামারে পানি ওঠায় ২৪ টি গরু নিয়ে তিনি বিপদে রয়েছেন। এর মধ্যে ১৫টি গরু পার্শ্ববর্তী একটি রাস্তায় ঘর করে রাখলেও বাকি ৯টি গরু এখনও পানির মধ্যেই রয়েছে। বন্যার কারণে গরুর ঘাস, খড় সব নষ্ট হয়ে গেছে এবং নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় অন্য এলাকা থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় আমার ইউনিয়নের অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহযোগিতা দরকার। আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ত্রাণের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছি।
মৎস্য চাষি শাহীন সরকার বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে ঘেরে ৫ ফুট উঁচু করে নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েছি। ঘেরে প্রায় ৩ লাখ টাকার পোনা ছেড়েছিলাম ৩ মাস আগে, এই মুহূর্তে সেগুলো ধরারও উপযোগী হয়নি। অপর মৎস্য ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে আমার ৫ লাখ টাকার মাছ ঘের থেকে বের হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় বাধ দিয়ে চেষ্টা করার পরেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। এছাড়া বিষাক্ত পানির কারণে প্রতিদিনই মাছ মরে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, সাভারের বিভিন্ন অঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। আমরা প্লাবিত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করব। তারপর যেসব মৎস্য খামারিদের ক্ষতি হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করে অধিদফতরে পাঠানো হবে।
এদিকে বন্যার পানির সাথে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত কালো পানি খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। সাভার-আশুলিয়ার অনেক শ্রমিক কলোনিতে বিষাক্ত কালো পানি ওঠায় পানিবন্দী হয়ে দিনযাপন করছেন ১৫ হাজারেরও অধিক পরিবার।
পোশাক শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার বলেন, গত কয়েকদিনের বন্যায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই পানিতে ভিজে কারখানায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। আর দুই একদিন এভাবে চলতে থাকলে ঘরেও পানি উঠে যাবে। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত ও কলকারখানার বিষাক্ত কালো পানি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে শরীরে চুলকানিসহ পায়ে ঘা হয়ে গেছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা জানান, এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। এ সময় ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। কেউ আক্রান্ত হলে কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ আছে সেখান থেকে সংগ্রহ করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।দেশ রূপান্তর, বিডি নিউজ