শিরোনাম
◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন ◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের!, তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল

প্রকাশিত : ২৮ জুন, ২০২০, ০১:১৪ রাত
আপডেট : ২৮ জুন, ২০২০, ০১:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কালেমা পরে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে ঘুমাতাম ! কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির আবেগঘন স্ট্যাটাস

এনএম মেহেদীর ফেইসবুক থেকে : আমার স্ত্রী গত ৬ জুন বিকেল থেকে কিছু ঘণ্টার ব্যবধানে জ্বর, সর্দি, শরীর, গলা এবং মাথা ব্যাথা, কিছুটা শ্বাসকষ্ট উপলব্ধি করতে থাকে। আমাকে জানানোর সাথে সাথে বাসার একটি রুম সম্পূর্ণ আলাদা করে দেই তার জন্য। সাথে খাওয়া দাওয়ার উপকরণ এবং ব্যবহার্য সব কিছু তার কাছাকাছি দিয়ে আমাদের মেয়ে ইনারাকে নিয়ে আমাদের বেড রুমে আমি ইনারা আলাদা হয়ে যাই। আমি কিছুটা চিন্তায় পরে যাই কারণ সে যদি পজেটিভ হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরও পজেটিভ হওয়ার ঝুঁকি অধিক। সব চিন্তা বাদ দিয়ে তাকে ভরসা এবং সাহস দিতে থাকি যেন তার মনোবলটা বৃদ্ধি পায়। আমি মেয়েকে একা এক রুমে টিভিতে কার্টুনও লেখাপড়ার উপকরণ দিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ আনতে যাই, এসে শুনি মেয়ে কয়েকবার তার মাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছে।

সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে যতটুকু পারলাম বোঝালাম এখন কিছুদিন মায়ের কাছে যাওয়া যাবে না তাকে ধরা যাবেনা !! স্বভাবতই মেয়ের প্রশ্ন বাবা কেন ?

সব কিছু সহজ করে বলে তাকে বুঝাতে অনেকটা সমর্থ হই। আর তার মায়ের রুমের ১৫ ফিট দূরত্বে একটা দাগ একে দেই, আর ভালো করে বুঝিয়ে দেই মা কোন কারনে এই দাগ অতিক্রম করা যাবে না। জবাবে মেয়ে সব সময় বলতে থাকে বাবা আচ্ছা। এবং লক্ষী মেয়ের মতো মানতেও থাকে। কিন্তু মা সন্তান বলে কথা মেয়ে যে কোন বায়না বা অজুহাতে মায়ের কাছে চলে আসতো যখন আমি ঔষধ বা প্রয়োজনীয় কিছু আনতে বাহিরে যেতাম।

রাত যতো গভীর হতে থাকে তার শারীরিক যন্ত্রণা গুলো আরো প্রকট হতে থাকে বিছানা থেকে মুভ করাটা তার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। শুধু ওয়াশরুমে যাওয়া ছাড়া বাকি সব আবশ্যকীয় উপকরণ এবং খাবার নিয়ে আসা এবং সময় মতো এগুলো নিয়ে আবার জীবাণুমুক্ত করা সব কিছু একাই করতে থাকি পাশাপাশি মেয়ের সব দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা। আর মেয়েটার প্রচন্ড দৌরাত্ম্য সহ্য করা আর প্রায়শই মিনিট পাঁচেক পরপর এটা দাও সেটা দাও এবং রাতজাগা পাখি আমার মেয়ে। যা আগে তার মা আমি দুজন মিলে মানিয়ে নিতাম। কিন্তু এই সময়টায় আমি একা একা হিমশিম খেতে থাকি। আর করোনার কারণে বাসায় হোম সার্ভেন্ট বা কোন হেল্পিং হ্যান্ডের সাপোর্ট নেই অনেক দিন। আর এই মুহূর্তমধ্যে কাউকে এসে কাজে সাহায্য করতে বলাটাও ঠিক হবে না।

যাক আমি মনোবল সাহস হারাইনি একা একা সব দায়িত্ব সুন্দর করে পালন করতে থাকি। তার পাশাপাশি আমি বুঝে গেছি খুব শীঘ্রই আমিও Covid-19 পজেটিভ হতে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা পরিবারকে সুরক্ষিত রাখাটাই ছিলো তখন আমার মূল মন্ত্র।

দ্বিতীয় দিন স্ত্রীর অবস্থা অত্যন্ত খারাপের দিকে যেতে থাকে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, জ্বর ১০৩°, খাবারে সম্পূর্ণ স্বাদ এবং নাকে কোন ঘ্রাণ না পাওয়া। আমি একজন Covid-19 আক্রান্ত রোগীকে যা যা ঘরোয়া চিকিৎসা করা প্রয়োজন সবই করাতে থাকি। যেমন পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন-সি আছে এমন ফল, চার থেকে পাঁচ বার অন্তত ১০ মিনিট গরম পানির ভাপ এবং গার্গল করাও প্রয়োজনীয় ঔষধ নেওয়া। আল্লাহর রহমতে তৃতীয় দিন সে প্রথম এবং দ্বিতীয় দিন থেকে অনেকটা ভালো অনুভব করতে থাকে। এবং চতুর্থ দিন ক্লান্তি, দুর্বলতা, অনেকটা শরীর ব্যাথা ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা থাকে না। আমি অনেকটা আশ্বাসিত হই মহান আল্লাহতালা হয়তো রহমত বর্ষণ করছেন।

৯ জুন থেকে আমার সামান্য জ্বর অনুভূতি হতে থাকে এবং ১০ জুন সব Covid-19 উপসর্গ একটার পর একটা দেখা দিতে থাকে ১০১° জ্বর, তীব্র ঠান্ডা সর্দি, প্রচন্ড শরীরের মাংস পেশী সহ পুরো শরীর ব্যাথা, পেটে সামান্য সমস্যা এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ঝাপসা হয়ে যাওয়া। এর মধ্যে আমি তখন থেকে আমার স্ত্রীর জায়গায় চলে আসি সে চলে যায় আমার জায়গাটিতে। আমি নিজেকে মানসিক ভাবে উদ্যত করতে থাকি এই যুদ্ধ জয়ের। এ এক অদ্ভুত অচেনা জ্বর অন্যরকম শরীর ব্যাথা যার তীব্রতা এতটাই ম্যানিফেস্ট যখন আমি শরীরে টি-শার্টটি পড়ার সময় কটনের স্পর্শে তাতেও ব্যাথা অনুভব করতাম। একদিন বউয়ের কাছে একটা বালিশ চাই সে যখন কাছে আসে দুরত্ব মেনে ছুড়ে মারতে বলি আস্তে ছুড়ে দেওয়া বালিশটি আমার পিঠে পড়ে, আমি এই নরম বালিশের আঘাতে ৫ থেকে ৬ মিনিট কাতরাতে থাকি ব্যাথায় মনে হচ্ছিলো একটা আস্ত ইট আমার পিঠে সজোড়ে মেরেছে। ব্যাথায় আমার শরীর প্রায়ই লকড হয়ে থাকতো বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট আটকে থাকতাম, এমন রাত কেটেছে রাত চারটায় আমার প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে এখন ফ্যান অফ করতে হবে, আমি ব্যাথায় ওঠতে না পেরে ৫ মিনিটে আস্তে আস্তে হামাগুড়ি দিয়ে ১০ ফিট দুরত্বের ফ্যানের সুইচ অফ করি।

এই ভাবে চার দিন অতিবাহিত হয়, আমার শরীর আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে। নিয়মিত জ্বর সর্দির ঔষধ খেতে থাকি। পঞ্চম দিন আরো অবনতির দিকে যায়। ওই দিন খাবারে সম্পূর্ণ স্বাদ এবং নাকে কোন গন্ধ না পাওয়া শুরু হয় এবং দুই নাক সম্পুর্ণ আটকে থাকে শ্বাস প্রশ্বাস মুখ দিয়ে নিতে হচ্ছিল যা আমার কষ্টকে নতুন রুপ দেয়। সেইদিন প্রথম কুমিল্লা মেডিকেলের বন্ধু ডাক্তার HM Hasib কে মোবাইলে সব জানাই। কিছু ঔষধ প্রেসক্রাইব করে, যাতে ছিলো নাকের একটা ড্রপ অসাধারণ কাজ করে তিন দিনের দুই বন্ধ নাক চার ফুটায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে খুব ভালো ভাবেই খুলে যায়। অনেকটা রিলিফ ফিল করি।

আমার যেদিন থেকে জ্বর আসে তার অনেক আগে থেকেই আমি নিয়মিত গরম পানি, প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার তালিকায় রাখি সব সময় এবং জ্বর হওয়ার পর থেকে এর পরিমান আরো বাড়াই পাশাপাশি চার বেলা গরম পানির ভাপ নিচ্ছিলাম প্রত্যেকবার ১০ মিনিট করে।

ষষ্ঠ থেকে সপ্তম দিন থেকে আমি আস্তে আস্তে শারীরিক ভাবে অনেকটা নিষ্প্রভ হতে থাকি। কারণ জ্বরের টেম্পারেচার যতো দিন যাচ্ছে আর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রথম দিকে যা থাকতো ১০০° থেকে ১০১° তা ১০৩° ফারেনহাইট সব সময় এখন। আর প্রথম দিন যে জ্বর আসে এখন অব্দি এতো দিনে ১ মিনিটের জন্য শরীর থেকে জ্বর আর ব্যাথা যায় নি। শারীরিক ভাবে আর পারছিলাম না কিন্তু মনোবলের ভিত্তিটা শক্ত ছিলো, কিন্তু তাও অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যায় যখন সপ্তম থেকে দশম দিন পর্যন্ত যাই খেতাম তাই বমি হয়ে যেতো পাশাপাশি জ্বর এবং অন্যন্য সমস্যা গুলো আরো প্রকট হলো। কিন্তু ভয় পাইনি।

আমার এই অবনতি দেখে আমার স্ত্রীও অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে যেতে থাকে আমি বুঝতে পারি কিন্তু সে আমাকে বুজতে দেয়নি, আমার শরীর এবং মনোবল ঠিক রাখতে যা যা প্রয়োজন নিজে অসুস্থ থাকা সত্বেও করে যাচ্ছে অবলীলায়।

অষ্টম দিনে ২ জন বড় ভাই ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি উনারা সব শুনে মোটামুটি নিশ্চিত আমি পজেটিভ কিছু উপদেশ দিয়ে সাহস দিলেন ভালো হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। তবে বেশি সমস্যা দেখা দিলে যেনো মেডিকেলে চলে যাই। এবং যাতে অবশ্যই Covid-19 টেস্ট করাই। এতো দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু আমার কোন ইচ্ছে ছিলো না Covid-19 টেস্ট করানোর কারণ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে পারা আর হাতে সোনার হরিন পাওয়া নাকি এক কথা এতো দিনে যা যানলাম!! কিন্তু ডাক্তাররা আমাকে বারবার বলে আসছেন যেকোনো উপায়ে টেস্টটা করাতে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে অনেক চেষ্টা করে টেস্টের জন্য নাম ঠিকানা দিতে সক্ষম হই এবং উনারা জানান দুই দিনের মধ্যে কোভিড নমুনা সংগ্রহের জন্য ডাকবেন। এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে যেয়ে আমাকে নমুনা দিয়ে আসতে হবে যদিও তখন আমি নিজে যেয়ে নমুনা দেওয়ার জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম ছিলাম না।

অষ্টম এবং নবম দিন আমি অনেকটা অচেতন, কি করলে কি হবে বা কার কাছে যাবো, আমার অনেক বন্ধু এবং অনেক বড় ভাই ডাক্তার থাকা সত্বেও তখন কারো কন্টাক্ট বের করে যে কাউকে ফোন দিয়ে ব্যাপার গুলি জানাবো আমি এগুলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি অনেকটা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। শুধু স্ত্রীকে এতটুকু বলি কি করবে আমাকে কিভাবে বাঁচাবে এখন সব তোমার চেষ্টার উপর অনেকটা নির্ভর করবে।

দশম দিন স্ত্রী এবং স্ত্রীর ভাই Rony Anis ভাই এর সহায়তায় অনেক কষ্ট করে অনেককে ফোন দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে একজন ডাক্তারকে দেখানোর ব্যবস্থা করলো, প্রথম অবস্থায় উনি দেখতে চাননি বলেছেন কুমিল্লা মেডিকেলে জরুরি বিভাগে যেয়ে ডাক্তার দেখাতে। এমন অনেক ডাক্তার দেখবেন না নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ উনাদের যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই আমার মতো কোভিড সাসপেক্ট রুগিকে দেখার। যাক অনেক রিকুয়েষ্টে এই মানবিক ডাক্তার সাহেব যিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমাকে নিয়ে যেতে বললেন। উনি আমার চার ফিট দূরত্বে থেকে আমাকে দেখেন এবং সব সমস্যা শুনে ৭ টি পরীক্ষা করতে প্রেসক্রাইব করেন। ২ ঘন্টার ব্যবধানে পরীক্ষার সব রিপোর্ট স্ত্রী হাতে পেয়েছে ডাক্তারকে দেখালো সব গুলো রিপোর্ট নরমাল/ভালো আছে। তার মানে আমার Covid-19 পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা এখন খুব বেশি ডাক্তার সাহেব বললেন। যদি রিপোর্ট খারাপ আসতো তাহলে ধরে নিতাম এই এই সমস্যার কারনে আমি এই এই কস্ট গুলো পাচ্ছি।

১০ম দিন থেকে নতুন করে উদ্বৃত্ত হলো কাশী যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে পাশাপাশি কিছুটা শ্বাসকষ্ট নিয়ে। ১১তম দিনে সকাল ১০ টায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন থেকে ডাকেন নমুনা দিতে সময় মতো যাই এবং সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে নমুনা দিয়ে আসি উনারা ৪ দিন পরে পজেটিভ/নেগেটিভ জানাবেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চলে আসি।

এভাবে আমার ১৩ দিন জ্বর থাকে। ১০ থেকে ১৩ দিনের তিন দিন সবচেয়ে কস্টের সময়টা অতিক্রম করি জ্বর থাকে ১০৩.৭° পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শরীর ব্যাথা এবং অন্যান্য সমস্যা গুলোতো আছেই। আমি বাঁচার আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি শেষ ৩ থেকে চার দিন বেশিই কষ্ট পেয়েছি যা পরিমাপ করা যাবেনা হয়তো কখনো। ভয় তেমন কাজ করেনি কিন্তু এতো গুলো সমস্যা যন্ত্রণা নিতে পারছিলাম না, বউ যখন চলে যেতো ঘুমাতে আমিও ঘুমের প্রস্তুতি নিতাম কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে মহান আল্লাহতালার কাছে নিজের সকল গুনাহের জন্য মাফ চেয়ে একমাত্র কলিজা সন্তান, মা, বাবা এবং স্ত্রী আপনজনদের জন্য মহান আল্লাহতালার কাছে মঙ্গল কামনা করে কালেমা পরে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে ঘুমাতাম। শুধু বেশি কষ্ট লাগতো এই অবস্থাতে মা বাবা কেন ঢাকা আর কুমিল্লা এই সময়টায় মা বাবা কাছে নেই!! কেন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউ একজন একজনের কাছাকাছি আসা যায় না। পাশের রুমে থেকেও মেয়েটাকে একটু স্পর্শ করতে পারি না।

শেষের দুই দিন প্রচন্ড কাশি এবং শ্বাসকষ্ট কিছুক্ষণ পরপর কাশি টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট থাকে যখন শুরু হয়। এভাবে দিন ২ বার শুধু শ্বাসকষ্টের ইনহেলার নিতাম এবং কিছুক্ষণ সম্পুর্ন উল্টো হয়ে মানে পিঠ উপরের দিকে দিয়ে শুয়ে থাকতাম তাতে কিছুটা নিরাময় হতো। ডাক্তারকে স্ত্রী জানালেন ডাক্তারের একটাই কথা হসপিটালাইজড করেন তারাতাড়ি এক্ষেত্রে বড় কিছু হয়ে যেতে পারে রোগী এই কন্ডিশনে বাসায় নিরাপদ না। কিন্তু আমরা দুই জনই হাসপাতালে ভর্তির পক্ষপাতিত্ব ছিলামনা।

কিছু ডাক্তাররা সাপোর্ট দিবেন এবং সকলকে দিয়ে আসছেন কিন্তু কতক্ষণ আমাদের স্বাস্থ্য খাতের যেই নশ্বর ভঙ্গুর অবস্থা এই পান্ডেমিক সিচুয়েশনে উনারা কি আমাদেরকে সেবা দিতে চান না? অবশ্যই চান!! কিন্তু সেবা দেওয়ার নামে অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে যে উনারা যুদ্ধ করবেন সেই যুদ্ধ সরঞ্জাম উনাদের কাছে অপর্যাপ্ত এবং নিম্নমানের, যা দিয়ে নিয়মিত যুদ্ধ করতে গেলে উনাদেরই মৃত্যুর মিছিল থামবে না। যাক শেষে ডাক্তারকে বলা হলো আমরা হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি না আপনি কাশিটা কমানোর ব্যবস্থা করেন, তখন উনি দুইটা ইনজেকশন দিতে বললেন। ইনজেকশন দিবো কিন্তু কোন লোক আসতে চায় না ইনজেকশন নাম আর রোগীর অসুস্থতার ধরন শুনে বুঝে যায় Covid-19 রোগী আসতে চায় না। আমার কাশি থামছে না। আবার রনি ভাইকে জানানো হয় উনি অনেক যুদ্ধ করে হাজার রিকুয়েষ্ট করে একজন ইনজেক্টর আমার বাসায় পাঠাতে সক্ষম হন। আমার প্রতি এই মানবিন উপকার গুলোর জন্য সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকবো রনি ভাইয়ের কাছে। ইনজেকশন গুলো দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর আরও কিছু ঔষধের উপকারে কাশিটা আস্তে-ধীরে কমতে থাকে।

মহান আল্লাহতালা আমার দিকে ফিরে তাকান ১৩ তম দিন হঠাৎ শরীর প্রচন্ড পরিমানে ঘামতে থাকে অনবরত ৩০ মিনিটের মতো পাশাপাশি বুঝতে পারি জ্বরটাও আস্তে আস্তে নামছে। এর মধ্যে দুই দিন অতিবাহিত হলো এখন আমার জ্বর এবং শরীর ব্যাথা নেই একবারেই। শুধু প্রচন্ডরকম শরীর দুর্বলতা, খাবারে সম্পুর্ণ স্বাদ এবং নাকে কোন গন্ধ না পাওয়াটা এখনো আছে। আবার গত দিন থেকে আগের চেয়ে অনেকটা বেশী পরিমান খেতে পারি। আমি বুঝতে পারছি আমি এই যুদ্ধ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।

আমি পজেটিভ হওয়ার থেকে টানা ১৬ দিন আমার মেয়েকে স্পর্শ করিনি, ১৫ ফিট একে দেওয়া দাগের ভিতরে আসতে দেই নি। মেয়ে শুধু একটা রিকুয়েষ্ট করতো বাবা আমি দাগের এখানে মেঝেতে এসে খেলনা নিয়ে খেলবো আর তোমাকে দেখবো, আর তুমি আমাকে দুর থেকে গল্প বলবে, আগে মেয়ে প্রতি রাতে আমার বুকে এসে আমার মুখে এক ঘন্টা গল্প না শুনলে কখনো ঘুমাতো না। ১৬ টা দিন পাশাপাশি দুই রুমে থেকেও নিজের মেয়েকে ছাড়া ঘোমানোটা আমার জন্য মেয়ের জন্য অনেক দুরূহ ছিলো। আর মেয়ে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের সাথে কান্নাকাটি বাবার জ্বর কখন ভালো হবে। আমি বাবাকে ধরতে পারি না। আমি যখন দূর থেকে বলতাম আল্লাহর কাছে দোয়া করো মা, সাথে সাথে নিজের নামাজের জায়নামাজ নিয়ে বসে যেতো এবং নিজের মতো করে সেজদা দিয়ে নামাজ পড়ে মুনাজাত করতো।

আমার এতো দিনের কষ্ট আমার কাছে কিছুই মনে হয় না কারন আমাদের দুইজন আক্রান্ত মা, বাবার মাঝে থেকেও আমাদের রাজকন্যার মধ্যে কোন প্রকার উপসর্গ এখন পর্যন্ত দেখিনি সম্পুর্ণ সুস্থ আছে আমার ইনারাটা। মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা আকুতি সন্তানটা ভালো এবং সুস্থ থাকুক।

পাশাপাশি আমার পরিবারে মা, বাবা, বোন, ভাই নিকট আত্মীয় এবং আমার স্ত্রীর পরিবারের সকলে আমার নিয়মিত খোঁজখবর রেখে মহান আল্লাহর কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করতেন, সকলের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ থাকবো সর্বদা। মহান আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা সকলকে যেনো উনি এই ভাইরাস থেকে সদা সর্বক্ষণ হেফাজতে রাখেন।

গতকাল ২৫ জুন আমার মোবাইলে SMS আসে DGHS ( Directorate General of Health Services) থেকে আমার কোভিড-১৯ এর জন্য দেওয়া নমুনাটি #পজেটিভ।

কিছুদিন পরে আবার নমুনা দিবো ইনশাআল্লাহ যদি নেগেটিভ আসে এবং আমার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়া থেকে ১৪ দিন পর আমি প্লাজমা ডোনেট এর জন্য এলিজেবল হবো। এবং এন্টিবডি টেস্ট এর পরে আমি প্লাজমা ডোনেট করবো ইনশাআল্লাহ। আমি নিয়মিত রক্ত দেই যদি এই মহামারী কালীন সময়ে কোন মুমূর্ষু আক্রান্ত যে কাউকে নিজের প্লাজমা ডোনেট করতে পারি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন, যেনো নানা প্রকার ঔষধ এবং হাই এন্টিবায়োটিক এর ধকল এবং শারীরিক দুর্বলতা আমি কাটিয়ে উঠতে পারি ত্বরন্বিত ভাবে, আগের মতো সুস্থ সবলও প্রাণচঞ্চল হয়ে সকলের মাঝে ফিরে আসতে পারি।

#ধন্যবাদ সকলকে যারা আগ্রহ নিয়ে আমার এতো বড় লিখাটি পড়ে নিজের বহুমূল্য সময় নস্ট করেছেন। এবং পরিশেষে আপনাদের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা এই ভাইরাস থেকে নিজে সাবধান থাকুন, পরিবারকে সাবধানে রাখুন এবং সমাজও দেশটা কে নিরাপদে রাখুন।

ফেসবুক থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়