সালেহ্ বিপ্লব : করোনাকালে শিশুপুত্রের সঙ্গে দূরত্ব ভীষণ রকম বেড়েছে। জন্মের পর দ্বিতীয় বছরে বাচ্চারা মানুষ চিনতে শুরু করে, এটা ওটার নাম দিতে শুরু করে। পিতৃত্বের এই দারুণ সময়টা মিস করছেন আমাদের নতুন সময়ের বিশেষ সংবাদদাতা ভূঁইয়া আশিক রহমান।
পুত্রের জন্মদিনে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, শিরোনাম : আমার পুনর্জন্ম নেওয়া বাবার বয়স দুবছর পূর্তির দিনে, কাছে আসার গল্প লেখার প্রতীক্ষায়
‘আলাভী, কে ফোন করেছে?’-‘বাবা’। ‘বাবা কোথায় থাকে?’ -‘ফোনে!’ মা ও তার দুই বছর বয়সী সন্তান আবরার আলাভীর প্রতিদিনকার কথোপকথন চিত্র। রিং বাজলেই মাকে সে ফোন এগিয়ে দেয়। বলে, আম্মু, ও আম্মু, আম্মু- বাবা। এতোদিনে দেখে দেখে বুঝে নিয়েছে সে, বাবা তার কদাচিৎই বাড়িতে আসে, কথা হয় ফোনে। দেখা দেয় ইমুতে। ছোট আলাভী ধরে নেয়, বাবা তার ফোনেই থাকে!
কেন ছোট্ট এই আলাভীর বাবা ফোনে থাকেন? অনেক কারণের একটি- আমার স্ত্রী একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। ফলে প্রতি সপ্তাহে আমার বাড়িতে যাওয়া অবধারিত হলেও করোনাকাল শুরুর পর, বিগত চার মাসে মাত্র একবার বাড়িতে গিয়েছি কোভিড-১৯ টেস্ট করে, ঈদ-উল ফিতরে। না গেলে স্ত্রী-সন্তান মন খারাপ করবে। মা, গোপনে মুখ লুকিয়ে কাঁদবে, একমাত্র ছেলে তার কাছে নেই।
বেড়ে ওঠার কালে আলাভী তার বাবার কণ্ঠ ফোনকলে শুনে, ভিডিও কলে দেখে দেখে বড় হচ্ছে। যা দেখছে, যা শুনছে, যা বুঝছে- সে তাই বলছে। এতে রোজ আদরবঞ্চিত আলাভী তার বাবাকে দুকথা শোনাতে পারে। বলতে পারে অভিমানে, তুমি কেমন বাবা, কাছে রাখো না। ভালোবাসো না। আদর করো না। তুমি, পচা বাবা!
না, আলাভী তার বাবাকে পচা ‘বাবা’ বলে না। অভিমান করে না। কাছে না পেলে, রোজ আদর না পেলে, রোজ ভালোবাসা বঞ্চিত হলেও ভিডিও কলে, কাচুমাচু করে মুঠোফোন স্ক্রিণের সামনে এসে দাঁড়ায়। লাজুক হাসে। বলে, আম্মু, ও আম্মু, বাবা। বলেই একটু দূরে সরে যায়, খাট থেকে নামে। আবার মুঠোফোন স্ক্রিণের সামনে আসে। যায় আসে- আসে যায়। কখনো সে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। দুষ্টুমি করে। যেন সে তার বাবাকে অভয় দেয়, আমরা ভালো আছি। আনন্দ করছি। খুশিতে আছি, তুমি চিন্তা করো না, বাবা!
কাছে আসার মধুর সেই গল্পটা কবে লিখতে পারবো!
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :