তন্ময় আলমগীর, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: [২] এর মধ্যে উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী (১৩) গণধর্ষণে এবং দেওঘর ইউনিয়নে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরী (১৫) ধর্ষণে অন্ত:সত্ত্বা হয়েছে।
[৩] দুই কিশোরীর মধ্যে ধর্ষণের শিকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীর ভিক্ষুক পিতা বাদী হয়ে গত শনিবার (২০ জুন) অষ্টগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
[৪] অন্যদিকে ছাত্রীর পরিবারের দারিদ্রতা ও অসহায়ত্বের সুযোগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল গণধর্ষণের বিষয়টিকে নানাভাবে ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা করছে।
[৫] বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের মামলায় আসামির নাম জাসেম মিয়া (২১)। সে উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের মোল্লা বাড়ীর আলমগীর মিয়ার ছেলে।
[৬] কিশোরীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি বিকালে ধর্ষক জাসেম অর্থ ও পোশাকের প্রলোভন দেখিয়ে হাজী এমরান মিয়ার দোচালা টিনের ঘরে নিয়ে ধর্ষিতা কিশোরীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে নানা সময়ে ধর্ষক জাসেম একাধিকবার মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পরে। কিশোরী এখন ৬ মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
[৭] ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীর পিতা (৭০) পেশায় একজন ভিক্ষুক। নিজের কোনো জমিজমা না থাকায় বিভিন্ন মানুষের জায়গায় আশ্রয় বানিয়ে তিনি জীবনযাপন করেন। বর্তমানে তিনি দেওঘর ইউনিয়নের মোল্লা বাড়ির হাজী এমরান মিয়ার বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছেন।
[৮] এ বিষয়ে গত শনিবার (২০ জুন) অষ্টগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০৩ (সংশোধনী) আইনে ৯(১) ধারায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে মামলা (নং-৬) দায়ের করেন।
[৯] এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান জানান, মামলা দায়েরের পর কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতালে কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৪ এ হাজির করা হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিম আক্তার ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ২২ ধারায় জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করেছেন। আসামি গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
[১০] এদিকে উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের মসজিদজাম এলাকার সোনারু হাটি গ্রামের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী গণধর্ষণে অভিযুক্তরা হচ্ছে, মনছুর মিয়া (৫৫) ও শেখ নজরুল ইসলাম (৪৫)। দুই অভিযুক্তের মধ্যে মনছুর মসজিদজাম এলাকার সোনারু হাটি গ্রামের মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে ও নজরুল একই ইউনিয়নের শেখের হাটি গ্রামের মৃত শেখ মঈন উদ্দিনের ছেলে।
[১১] অন্ত:সত্ত্বা স্কুল ছাত্রী ও পরিবারের তথ্য মতে, কিশোরী স্থানীয় অষ্টগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ১৬ই জানুয়ারি রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে পাশের বাড়ির মনছুর মিয়া ও শেখ নজরুল ইসলাম কিশোরীর ঘরে ঢুকে দড়ি দিয়ে মেয়েটিকে বেঁধে ফেলে। প্রথমে মনসুর ও পরে নজরুল হত্যার হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী টের পেয়ে গেলে দুই ধর্ষক দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গণধর্ষণের শিকার হয়ে এই ছাত্রী এখন পাঁচ মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
[১২] ছাত্রীর মা জানান, মেয়েটি বাড়িতে একা থেকে স্কুলে লেখাপড়া করে। এ সুযোগে প্রতিবেশী মনছুর তার সহযোগী নজরুলকে নিয়ে তার মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। সুবিচারের আশায় তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।
[১৩] অষ্টগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাসিমা আক্তারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। মেয়েটি আমার বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। সমাজের এমন অবক্ষয় এই প্রজন্মকে বিপথে নিচ্ছে। মেয়েটি যাতে সুবিচার পায় সে বিষয়ে আমার বিদ্যালয় মেয়েটির পাশে থাকবে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :