আনিস তপন : [২] গত বছর জুলাইতে আগামী এক বছরের জন্য সরকারের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
[৩] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের প্রধান পাঁচটি খাতেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের সব ফ্লাইট চলাচল বাতিল করা, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনার গাঁ ও হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল বন্ধ করে দেয়া, দেশব্যাপী পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেল বন্ধ ঘোষণা করা, বিমান বন্দরসমূহে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণ ও উড্ডয়ন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের কার্যাদেশ নির্ধারিত সময়ে দিতে না পারাতেই মূলত এপিএ'র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
[৪] এ বিষয়ে ঊর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, এই মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত সব সংস্থাগুলোই বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় এ খাত থেকে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অর্জন হবে না। সোনার গাঁ ও হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল এবং পর্যটন কর্পোরেশনের আওতাধীন হোটেল-মোটেল বন্ধ করে দেয়ায় এ খাত থেকে যে লাভের (প্রফিট) টার্গেট ছিল, সেটা হবে না। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দেশের বিমান বন্দর ও আকাশ পথ ব্যবহারের কারণে সিভিল এভিয়েশনের আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তাও পাওয়া যাবে না। তাছাড়া কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের জন্য গত ৩০ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেয়া যায়নি। এই সবগুলো বিষয় এপিএতে ধরা ছিল। করোনা মহামারীর কারণে এর একটিরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।
[৫] তাছাড়া দেশের পর্যটন শিল্পের উন্ননয়ন, বিকাশ ও দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সাহায্যে ট্যুরিজম বোর্ড একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্মসূচি নিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করা যায়নি। পর্যটনের উন্নয়নে জয়েন্ট ভেন্চারে (জার্মান, ভারত, বাংলাদেশ) বিদেশি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। দেশের ৬৪টি জেলা পর্যবেক্ষণ করে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারী-জুন) পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রাথমিক স্টাডি রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিজ দেশে ফেরত চলে যাওয়ায় এখনও স্টাডি রিপোর্টটি পাওয়া যায়নি। এ জন্য সরকারের ২৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পটিও এপিএতে ধরা আছে। যার লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
[৬] এদিকে, করোনার প্রভাবে সরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ বিমান এর আর্থিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। লাভতো দুরের কথা অর্থের অভাবে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা সিভিল এভিয়েশন, পর্যটন করপোরেশনের, হোটেল সোনার গাঁ ও ইন্টার কন্টিনেন্টালের। এগুলো সব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলেও গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ থাকায় কোনো আয় নেই অথচ কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমান দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে।
[৭] তবে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শতভাগ অর্জিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিমান সচিব মহিবুল হক জানান, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই। এ কারণে এ বছর এপিএ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এক্ষেত্রে আমরা সত্যি অসহায়। বিমান চলছে না, হোটেল চলছে না, সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন করপোরেশনে আয় হচ্ছে না। সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদেরও এ খাতগুলো বন্ধ রয়েছে। এসব আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে মন্ত্রণালয়ের এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছি। তাই এ বছর যে লক্ষ্যগুলো পুরণ হবে না, তা আগামী বছর সমন্বয় করা হবে। সম্পাদনা : রায়হান রাজীব