ডা. এসএম সহিদুল ইসলাম : দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল পবিত্র রমজান মাস। আগামীকাল দেশজুড়ে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। এবারের ঈদ উদযাপন কিছুটা ব্যতিক্রম হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর আক্রমণ সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও এর বিস্তৃতি ঘটছে।
আমাদের এবারের ঈদ পালন করতে হবে যথাযথ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে। ঈদের নামাজ পড়তে হবে শারীরিক দূরত্ব স্থাপন করে। বাসায় অবস্থান করতে হবে। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া এবার আমাদের পরিহার করতে হবে। কোলাকুলি, করমর্দন থেকেও বিরত থাকতে হবে।
রোজা রেখে আমরা সবাই এক ধরনের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের পাকস্থলীও সঙ্গে সঙ্গে সেইভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই রোজা শেষে আমরা যখন আবার পুরোনো খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যাই তখন অনেকের নানা ধরনের বিপত্তি ঘটে। অনেকেই পেট ফাঁপা, পেটে অস্বস্তি বোধ হওয়া, ঢেকুর আসা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়াসহ বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে পারেন। কেন এমন হয়?
কারণ হলো দীর্ঘ এক মাস পর হঠাৎ করে যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাবার গ্রহণ করা হয়, তখন পাকস্থলী তা গ্রহণ করে পরিমিত পরিমান পাচক রস নিঃসরণ করতে সময় নেয় অথবা ব্যর্থ হয়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। সবার ক্ষেত্রে কিন্তু এই সমস্যা হয় না। সাধারণত যারা রোজা সম্পূর্ণ করেন তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে।
তো আসুন জেনে নেওয়া যাক, কী করে আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি-
ঈদের দিন সকালে নামাজে যাওয়ার আগে হালকা একটু সেমাই অথবা পায়েস খাওয়া যেতে পারে, সঙ্গে যে কোনো একটি ফল। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পানি পান করতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নামাজ শেষে বাসায় এসেই কিন্তু খাবার খাওয়া যাবে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যে কোনো খাবার অল্প পরিমাণে, আস্তে আস্তে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। খাওয়ার মাঝে অথবা খাওয়া শেষ করেই পানি পান করা যাবে না। খাবার গ্রহণের অন্তত ১৫ মিনিট পর পানি পান করুন।
ঈদের দিন দুপুরের অথবা রাতের খাবারে সাধারণত পোলাও, রোস্ট, রেজালাসহ বিভিন্ন অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে কী করবেন? দয়া করে খাবারগুলো যতটুকু সম্ভব কম করে খাবেন। সালাদ, লেবু, সবজি বেশি করে খাবেন। ভারী খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর পানি পান করবেন। খাবারের মাঝে কথা কম বলার চেষ্টা করবেন এবং খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। এতে করে আপনার ঢেকুরের সমস্যা দূরীভূত হবে। কম মসলাযুক্ত খাবার এবং কম ঝাল দেওয়া খাবার গ্রহণ করবেন।
যাদের IBS আছে তারা দুধ অথবা দুগ্ধ জাত খাবার পরিহার করুন। এসিডিটি সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা চিকিৎসক এর দেয়া পরামর্শপত্র অনুযায়ী ওমেপ্রাজল/ রাবিপ্রাজল/ ইসোমিপ্রাজল ইত্যাদি সেবন করবেন। এছাড়া মসলা এবং ঝাল যতটুকু সম্ভব পরিহার করবেন।
সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি এক কাপ পানিতে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লতার সমস্যা দূর হবে বলে আশা করা যায়। খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। অন্তত পক্ষে ১৫ মিনিট ঘরের ভেতর হাঁটা চলা করুন।
এখন যে জটিল সময় যাচ্ছে, এই সময় আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই ধরনের খাবার যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই খাবারের মেনুতে লেবু, কাঁচা মরিচ রাখুন যাতে ভরপুর ভিটামিন সি আছে। এগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবার ঈদ সুন্দর ও ভালো কাটুক। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈদ মোবারক।