শাহীন খন্দকার : [২] বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে ঢাকার বস্তির বাসিন্দারা 'উচ্চ ঝুঁকি'র মধ্যে আছেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ঢাকায় প্রায় তিন হাজার চারশো বস্তিতে সাড়ে ছয় লাখের মতো মানুষের বসবাস করে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে হয়তো বুঝতে না পারলেও তাদের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব কিন্তু ঠিকই টের পাচ্ছেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালে বস্তি শুমারি করেছিলো পরিসংখ্যান ব্যুরো। এরপর আর কোন তথ্য পাওয়া যায়না।
[৩] প্রতিবছর নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা শুধু কাজের খোঁজেই হাজার হাজার মানুষ ঢাকা আসছেন। ২০১৪ সালে বস্তি শুমারি অনুযায়ী ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। বস্তি শুমারিতে তথ্য পাওয়া যায় , সেখানে মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজারের মতো। ঐ জরীপ অনুযায়ী সে সময় সাড়ে ৬ লাখের মতো লোক এসব বস্তিতে বসবাস করেন। গত ৬ বছর চলছে এখন সেটা কত হয়েছে তা নিশ্চিত নয়।
জানা যায় অর্ধেকের বেশি বস্তি সরকারি জমিতে তৈরি। ৬৫ শতাংশ বস্তিবাসী ভাড়া থাকেন। ২০১৪ সালের শুমারি অনুযায়ী সারা দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ। তবে এসব সংখ্যা ও তথ্য উপাত্ত নিয়ে বেশ বিতর্ক ও রয়েছে। এখন বস্তি বা বস্তিবাসীর সংখ্যা কত তার কোন হিসেব কারো জানা নেই।
[৪] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলছেন, তিনি সরকারি উপাত্তগুলোর উপরে ঠিক আস্থা রাখতে পারছেন না। তিনি বলছেন, "বস্তিবাসীর সংখ্যা বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ১৯৯৭ সালের এর পর বস্তি শুমারি হয়েছে এর পরে ২০১৪ সালে। সরকারি হিসেবেই এই সময়ের মধ্যে বস্তির সংখ্যা ছয়গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে কোন পরিকল্পনা যখন করা হয় তখন এই বিশাল জনসংখ্যার কথা খুব একটা মাথায় রাখা হয়না।" তথ্য বিবিসি।
[৫] কড়াইল বস্তিতে ৩০ বছর ধরে বাস করছেন সাহেরা বেওয়া বাড়ী রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। তিনি বলেন এই দীর্ঘ দিনে বহুবার বস্তি ভেঙে দিতে দেখেছেন। সাহেরা বেওয়া পেশায় গৃহকর্মী। রাজধানীর বস্তিতে মূলত যারা বাস করেন তারা পেশায় বেশিরভাগই পোশাক কর্মী, গৃহকর্মী, দিনমজুর, রিকশা চালক।
[৬] মিরপুরে চলন্তিকা নামের যে বস্তিটি এখানে, ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে কাজের সন্ধানে এসেছে রিক্তা (২৫)। তিনি বলেন এইখানে ২৮শত টাকা ভাড়ায় উঠছিলাম। করোনা ভাইরাসের মহামারি সর্ম্পকে বলেন, মনে হচ্ছে সব হারাইতেই যেন ঢাকায় আইছিলাম। অন্ধকার খুপরি, নোংরা গোসলখানা ও টয়লেট, এখানে সেখানে জমে আছে আবর্জনা। কোনরকমে একটা খাট বসালেই ঘরের জায়গা শেষ।