এম আমির হোসেন
ফেসবুকে করোনা, মিডিয়ায় করোনা, টিভিতে করোনা, আলোচনায় করোনা। আর কতো? এতো করোনা-করোনা করলে তো করোনা ভাইরাস আপনাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ না করলেও মানসিকভাবে ঠিকই আক্রমণ করে বসবে। আপনি হয়ে উঠবেন করোনা-আতঙ্কিত মানসিক রোগী। প্রতিদিন আড়াইটার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করে। তিন বছর হয়নি আমার সেই ছেলেও আড়াইটা বাজলেই বলতে থাকে, বাবা, বাবা, টিভি দেখো। কতোজন আক্রান্ত হলো?-কতোজন মরলো? কী এক দুঃসময় পার করছি আমরা।
শনাক্ত বাড়ছে? তাতো বাড়বেই। বেশি পরীক্ষা হলে শনাক্তও বেশি হবে- এটাই তো স্বাভাবিক। দিনদিন আক্রান্তও বাড়ছে। প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা শনাক্তের চাইতেও বহুগুণে বেশি। ব্যক্তি হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আর নিজের ইমিউনিটি বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর করার কিছুই নেই। আর আমরা যারা ডাক্তার তারা চেষ্টা করে যাচ্ছি জনগণের সুচিকিৎসা যেন অব্যাহত থাকে। করোনাই তো একমাত্র রোগ নয়, আরও হাজার হাজার রোগ আছে যেগুলোর চিকিৎসাও চলমান রাখতে হবে। সবাই শুধু করোনার পিছে ছুটলে অন্য রোগগুলোর চিকিৎসা দেবে কে? তাই আতঙ্কিত হোন, আতঙ্কিত হয়ে সচেতন হোন; তাই বলে অতি-আতঙ্কিত হয়ে মানসিক রোগী হবেন না। ধীরে-ধীরে এই করোনাকে আমাদের জীবনপ্রণালীর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। অমুকে হার্টএটাকে, তমুকে স্ট্রোকে বা অ্যাকসিডেন্টে যেমন মারা যায়, তেমনি আমরা বা আমাদের আপনজন কেউ কেউ মারা যেতে পারে করোনাতেও। এটা মেনে নিতে হবে। মেনে নিয়েই জীবনকে চলমান রাখতে হবে। মিডিয়াগুলোরও ভূমিকা আছে। সারাক্ষণ করোনা-করোনা না করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে, টেস্ট ক্রিকেটের মতো ‘কতোজন আক্রান্ত হলো-কতোজন মরলো’ সবসময় এই ব্রেকিং নিউজ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করে আনার চেষ্টা করতে হবে। করোনা মানেই মৃত্যু নয়। এর আশিভাগই মৃদুমাত্রার যা বাসায় বসে চিকিৎসা নিলেই ভালো হয়ে যায়। বাকি বিশ ভাগের মধ্যে মাত্র পাঁচভাগের আইসিইউ সাপোর্ট লাগে। করোনায় পূর্ণ সুস্থ হওয়ার হার মৃত্যুহারের চাইতে বহু-বহুগুণে বেশি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব রাষ্ট্র করবে। কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিজের ইমিউনিটি বাড়ানো আমাদের প্রধান দায়িত্ব। নিজের স্বার্থেই তা করতে হবে। ঈদ শপিং, ঘুরাঘুরি বন্ধ করুন দয়া করে। সবাইকে নিয়ে বাঁচুন। এই জরা-জীবাণু নিয়েই বাঁচুন। মনে সাহস রাখতে হবে। বিমর্ষ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। গান শুনুন, প্রিয়জনকে সময় দিন, অনলাইনে আড্ডা দিন, নিজের বিশ্বাসমত চর্চা করুন। কোনো সৃষ্টিশীল গুণাবলি থাকলে এই সুযোগে সেটার উৎকর্ষ সাধন করুন। এ যাত্রায় করোনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মানে এই নয় যে আপনি অমর হয়ে গেলেন। হয়তো সামনেই অন্য কোনো রোগে আপনি চিরতরে নাই হয়ে যেতে পারেন। তাই মৃত্যুকে নিয়ে এতো ভয় পেলে চলবে না। বিজ্ঞান অমরত্ব আবিষ্কার করার আগ পর্যন্ত মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। জীবনের দৌঁড়ঝাপ শেষ হয়ে গেলে মৃত্যু হলো চির-বিশ্রামের বিছানা। জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে...। মনে রাখবেন, আসল করোনার চেয়ে মনের করোনাই যেন আপনাকে আগে মেরে না ফেলে। ফেসবুক থেকে