মুসবা তিন্নি : [২] করোনার ভয়াবহতায় বিপর্যস্থ জনজীবন। সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ যখন মানবেতর জীবন যাপন করছে, ঠিক সেই মুহুর্তে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে ‘এই রমজান হোক সবার, আপনার বাড়িতে থাকার উপহার’ স্লোগানে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন রাজশাহীর ‘ফাইট এ্যাগেইনস্ট কোভিড- ১৯ (রাজশাহী)’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ।
[৩] করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে কর্মহীন, ঘরবন্দি, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌছে দিতে তারা হাতে নিয়েছেন ‘২ পট চাল ও ৪০ টাকা’ নামের এক অভিনব প্রকল্প। জানা গেছে, গ্রুপের এ্যাডমিন ও মডারেটর প্যানেলের সদস্যদের নেতৃত্বে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২ পট চাল ও ৪০ টাকা সংগ্রহ করছেন গ্রুপটির সদস্যরা।
[৪] সাহায্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এমন ক্ষুদ্র এবং ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গ্রুপের সদস্যরা জানান, সাহায্যের পরিমাণ কম হওয়ায় সেটা দিতে আপত্তি করবেনা কেউই। আপাতদৃষ্টিতে এই অনুদান খুবই সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু এই সামান্য অনুদানই বড় সংগ্রহে রুপ নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দুঃস্থ অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে।
[৫] রাজশাহী শহরকে বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় গিয়ে তারা এই চাল ও টাকা সংগ্রহ করছেন। স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রতিদিনের সংগ্রহ শেষে প্রত্যহ প্রাপ্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছে গ্রুপ থেকে। আর সে সংগ্রহ দিয়েই শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে করোনার প্রভাবে হঠাৎ কর্মহীন হওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ান তারা। কেবল খাদ্য সামগ্রী বিতরণেই থেমে নেই গ্রুপটির সেবা কার্যক্রম। গ্রুপের বিভিন্ন অভিজ্ঞ ডাক্তার সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি মেডিকেল টিম, যারা টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছেন। এছাড়াও গঠন করা হয়েছে রক্তদান শিবিরের, যার মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রুপের স্বেচ্ছায় রক্ত দাতা সদস্যদের দান করা রক্ত। ইতোমধ্যেই গ্রুপটি তাদের সেবার কার্যক্রম মহানগর এলাকার পাশাপাশি, আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।
[৬] গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ তালহা জানান, চীনে পড়ালেখা করার কারনে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা খুব কাছ থেকেই দেখেছিলেন। নিজের প্রিয় শহর রাজশাহীকে এর ভয়ঙ্কর থাবা থেকে বাঁচাতে দেশে এসেই কিছু করার চেষ্টা করেন। তারই ফলশ্রুতিতে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাত্র কয়েকজন শুভাকাঙ্খী নিয়ে গ্রুপটি খোলেন এবং গ্রুপের লক্ষ্যের কথা জানান। আর এতে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। বর্তমানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনাসহ যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের পাশে থাকতে চান তারা।
আপনার মতামত লিখুন :