ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনা ভাইরাসের মধ্যে পণ্য সরবরাহ সচল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর স্বল্পপরিসরে খোলা থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে টানা এক মাসের বেশি ধরে চলছে লকডাউন। এ কারণে পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে প্রায় ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক। এসব ট্রাকে রয়েছে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, কেমিক্যালসামগ্রী ও খাদ্যপণ্য। দীর্ঘদিন ধরে পণ্যবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিনই প্রায় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। কবে নাগাদ পেট্রাপোল বন্দর সচল হবে, তা জানেন না আমদানিকারকরা।
[৩] ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব পণ্য দ্রুত ছাড় করাতে না পারলে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। স্থবির হয়ে পড়বে শিল্প-কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া। এতে লোকসানের শিকার হয়ে পথে বসবেন ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা দেশের সহ¯্রাধিক ব্যবসায়ী। সরকারি উদ্যোগে এসব পণ্য ছাড় করানো গেলে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন তারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আটকে থাকা পণ্যের চালান প্রবেশ করানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভারতীয় অংশে প্রশাসন ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা সাড়া না দেওয়ায় সুফল আসছে না।
[৪] জানা গেছে, বাণিজ্যের দিক থেকে দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের পরই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম থেকেই এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ বেশি। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকেÑ যা থেকে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি মহামারী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশ ও এর প্রতিবেশী ভারতে ছড়িয়ে পড়ায় এর সংক্রমণ প্রতিরোধে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৬ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের পণ্যের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। এতে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকা পড়ে ৫ হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ইতোমধ্যে এসব পণ্য ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
[৫] বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, আটকে থাকা পণ্যের অধিকাংশই শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও খাদ্যপণ্য। বেশিদিন আটকে থাকলে এসব পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাবে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পণ্য আমদানি করেছেন। আটকে থাকা পণ্যের সব লোকসান আমদানিকারকদেরই বহন করতে হবে।
[৬] বাংলাদেশ-ভারত ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, চট্টগ্রামসহ অনান্য বন্দর আস্তে আস্তে সচলের দিকে গেলেও বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে বাণিজ্য সচলের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আংশিক বাণিজ্য সচলে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ভয়কে জয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে বসে থাকলে আগামী বছর সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।
[৭] বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্র্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, জরুরি আমদানিপণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর এলাকায় ট্রাকচালকরা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ভারত আটকে থাকা পণ্য ছাড় না দেওয়ায় পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। এতে ট্রাকচালকরাও দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে আটকে থাকা পণ্য ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা হলে কিছুটা হলেও ব্যবসায়ীরা লোকসান থেকে রক্ষা পাবেন।
[৮] বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, পেট্রাপোল বন্দরে আটকে থাকা জরুরি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ছাড় করাতে বারবার ভারতীয় অংশে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা ট্রাকচালকদের নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছিলাম। তারা পণ্য দেওয়ার কয়েকবার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি।আমাদের সময়