শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:২০ দুপুর
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:২০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বাংলাদেশ থেকে মাজেদকে টাকা পাঠাতেন দুজন

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ভারতের কলকাতায় আরাম-আয়েশে দেড় যুগের বেশি সময় পার করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। কলকতায় বসে তিনি বাংলাদেশে কথা বলতেন দুটি ফোন নম্বরে। বাংলাদেশ থেকে তাকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন দুই ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই দুই ব্যক্তির সন্ধানে নেমেছে।

ঘাতক মাজেদ কলকাতায় বিয়ে করেন নিজের চেয়ে অর্ধেকেরও কম বয়সী এক নারীকে। ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দেন। নাম পাল্টে ভারতীয় পাসপোর্টও নিয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় নানা অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি।

[৩] ঢাকার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জটিলতার মধ্যে অসদুদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ঢাকায় আসেন মাজেদ। তবে তার আগেই ধরা পড়ে যান তিনি। গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী থেকে খুনি মাজেদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত আসামি মাজেদ। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে কার্যকর হয় তার ফাঁসি।

[৪] খুনি মাজেদ কলকাতায় আলী আহমেদ নামে ভারতীয় পাসপোর্ট বাগিয়ে নেন। পাসপোর্টে তার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৭ সালের ৪ জানুয়ারি। ২০১৭ সালে তৈরি এ পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। তার জন্মস্থান দেখানো হয় হাওড়া। মাজেদকে নিয়ে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক বর্তমান ‘ঘাতকের ডেরা’ শিরোনামে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনগুলোয় উঠে এসেছে মাজেদের কলকাতা জীবনের আদ্যোপান্ত; একই সঙ্গে কলকাতা থেকে ঢাকা ফেরার কাহিনিও।

[৫] বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মাজেদ কলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। কিছু দিন ধরে তার শরীর খারাপ যাচ্ছিল। ৭২ বছর বয়সী মাজেদ জানুয়ারির শেষদিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি মাজেদ। উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্কস্ট্রিট থানায় জিডি করেন। ওইদিন সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পায় কলকাতা পুলিশ।

[৬] এতে দেখা গেছে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন মাজেদ। সেখানে আট মিনিটের মতো কাটানোর পর ১০টা ১২ মিনিটে রিপন স্ট্রিটের দিকে যেতে থাকেন। আর তখন থেকেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেন স্বাস্থ্যবান, কালো দাড়ি ও ব্যাকব্রাশ করা চুলের দুই ব্যক্তি। তাদের হাতে ছিল মোবাইল ফোন। পরে তাদের সঙ্গে আরও দুজন যোগ দেন। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সবার ছবিই পাওয়া গেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফের কর্মকর্তারা পিছু নেওয়া ওই যুবকদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিলেন। কারণ মাজেদ কলকাতায় সুদের ব্যবসা করতেন।

এর পরের ফুটেজে দেখা যায়, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা চলমান থাকা অবস্থায়ই মৌলালির দিক থেকে আসা সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের একটি বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে। ওই চারজনও বাসটিতে ওঠেন। এর পর আর ফুটেজে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।

[৭] ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র বর্তমান পত্রিকাকে জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইল ফোনের সব শেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ, যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, তাকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গৌহাটি, পরে শিলং হয়ে ডাউকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালে মাজেদ একবার ফোনটি চালু করেছিলেন।

[৮] পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা মাজেদকে চেনেন আলী আহমেদ হিসেবে। তাকে স্থানীয়রা আগে থেকেই সন্দেহের চোখে দেখতেন বলে জানিয়েছে কলকাতার স্থানীয় সূত্র। প্রথমে কলকাতার তালতলার ভাড়াবাড়িতে একা থাকতেন মাজেদ। পরে পার্কস্ট্রিটে চলে আসেন। ২০১১ সালে ৩২ বছরের ছোট হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন মাজেদ। তাদের ছয় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।

[৯] নিয়মিত বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে কথা বলতেন খুনি মাজেদ। ওই নম্বর দুটি ঢাকার গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করছিলেন বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। এরই সূত্র ধরে মাজেদকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভারত থেকে মাজেদের বাংলাদেশে প্রবেশ নিয়ে দুই দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এখনো কোনো পরিষ্কার ধারণা দেননি। বাংলাদেশে মাজেদের কথা বলা দুটি নম্বরের একটি ব্যবহার করতেন শাহীন নামে ঢাকার এক ব্যক্তি। কে এই শাহীন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

মাজেদের ভারতীয় নম্বরও তার নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না। স্ত্রীর নামে সিম কিনতেন এই ঘাতক। ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং আধার কার্ডও হাতিয়ে নেন খুনি মাজেদ। সব কিছুতেই নয়ছয়ের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়