সাঈদ তারেক : পাপের কলসি পূর্ণ হলে প্রকৃতির প্রতিশোধ শুরু হয়। আজ গোটা বিশ্বের যে অবস্থা, মাঝে মধ্যে মনে হয় তাই কী চলছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় তাকানো যায় না। প্রতি ঘণ্টায় লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে টলবার। চীনকে টেক্কা দিয়ে ইতালি, ইতালিকে অতিক্রম করে স্পেন, স্পেনকে পেছনে ফেলে আমেরিকা। যেন মৃত্যুর প্রতিযোগিতা। কারও কিছু করার নেই, তাকিয়ে তাকিয়ে মৃত্যুর এই মিছিলের সংখ্যা গোনা ছাড়া। এতো বড় বড় পরাক্রমশালী সব রাষ্ট্র সরকার, ট্যাংক মিসাইল ড্রোন ফাইটার জেট সাবমেরিন ক্ষেপণাস্ত্র নিউক্লিয়ার, নিমিষে মানব প্রজাতি ধ্বংসের সব আধুনিক মারণাস্ত্র, অথচ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি অণুজীবÑ চোখেও দেখা যায় না, তার কাছে কতো অসহায়। বাঘা বাঘা সব প-িত সায়েন্টিস্ট গবেষক বিজ্ঞানী এতোদিনে একটা প্রতিষেধক বের করতে পারলেন না। অথচ কতো বড়াই। দোর্দ- প্রতাপশালী সব রাষ্ট্র, শীর্ষ সন্ত্রাসী আমেরিকার নেতৃত্বে গত বিশটা বছর মধ্যপ্রাচ্যে কী নৃশংসতা বর্বরতা চালিয়েছে কল্পনা করে দেখুন। টুইন টাওয়ার ধ্বংসকে অজুহাত হিসেবে ধরে প্রথমে আফগানিস্তান, তারপর ইরাক, লিবিয়া, মিসর, লেবাবন, সিরিয়া তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। কখনো আল-কায়েদা ধ্বংসের নামে কখনো জীবাণু অস্ত্র বিনাশের নামে কখনো ‘ওয়ার অন টেরর’ জারি করে কখনো জঙ্গি নির্মূলের নামে, আইএস সৃষ্টি করে আবার আইএস দমনের নামে কতো লাখ মানুষকে এই সম্মিলিত বাহিনী হত্যা করেছে আজও তার হিসাব বের করা যায়নি। বিভিন্ন দেশে টর্চার সেল তৈরি করে আবু গরিব কারাগার গুয়ান্তানামো বে’র কারাগারে কী অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে বন্দিদের উপর। তাদের এই নির্মমতা, ববর্রতা, পৈশাচিকতার কারণে কোনো কোনো দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ সন্তান এতিম হয়েছে স্ত্রী বিধবা হয়েছে মা, বাবা, সন্তান হারিয়েছে। নির্যাতিত নিপীড়িতদের বুকফাটা আর্তনাদ চোখের পানিতে ফরিয়াদ দু’হাত তুলে বিচার প্রার্থনাÑ মনে হচ্ছে এ সব বৃথা যায়নি। সেই দস্যুসর্দার বুশ আজ ক্ষমতায় নেই, তার প্রধান স্যাঙাৎ টনি ব্লেয়ারও বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু গজবটা তাদের দেশের উপরই যেন বেশি। তাকিয়ে দেখুন সেই জোটের অন্যতম মিত্রদেশগুলোই আজ বেশি আক্রান্ত। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিÑ সবারই ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। প্রকৃতির প্রতিশোধ ছাড়া একে আর কী বলা যায়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের অনেক জাতি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলা আছেÑ যারা সীমা লঙ্ঘন করেছিলো।
কিন্তু দুঃখ হচ্ছে এই প্রতিশোধের বলি হচ্ছে নিরীহ মানুষ। সাধারণ জনগণ। প্রাণ যাচ্ছে নিরপরাধদের। জানি না কতো প্রাণের বিনিময়ে এই প্রতিশোধ শেষ হবে, তবে একদিন মানব প্রজাতি আবার উঠে দাঁড়াবে। ততোদিনে কোমর ভেঙে যাবে মহাশক্তিধরদের। যদি এই শিক্ষা থেকে বিশ্ব মোড়লরা ভবিষ্যতে একটি মানবিক পৃথিবী, একটি শান্তির পৃথিবী, যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেন, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের দাবিটা যৌক্তিক হবে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মানুষের সব চেষ্টা শেষ, এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আসুন আমরা দু’হাত তুলে আমাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। ফেসবুক থেকে