এম. আমান উল্লাহ : [২] করোনার প্রভাবে কক্সবাজারে কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। তাই চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো। প্রতিদিনের ন্যায় শহরের শহীদ স্মরণী রোডে শ্রমের খোঁজে অপেক্ষা করছিলেন সমিতি পাড়ার নুরুল হক। প্রায় দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কাজ পাওয়া গেলেও গত কয়েক দিন ধরে করুণা ভাইরাসের কারণে কাজ মিলছেনা। তিনি জানান, আমরা ২০ থেকে ৩০ জন প্রতিদিন এখানে আসি কাজের সন্ধানে। গত কয়েকদিন ধরে আমারা বেকার সময় পার করছি। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত যাপন করছি।
[৩] এসময় কাজের সন্ধানে আসা ঝিলংজার আলী মিয়া (৪২) বলেন, আমরা বাসাবাড়ির মেরামত, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘাষ কাটা, মাটি ভরাট সহ যেকোন কাজ করি। দৈনিক সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা দিয়ে কাজ করি। আবার অনেক সময় ৬০০ টাকা দিয়েও করি। আমার ছেলেরাও টমটম চালায়। ঘরে উপযুক্ত মেয়ে আছে। তারা সবাই লেখাপড়া করে। তাই অনেক খরচ। এখন কাজ না থাকায় আমরা খুব সমস্যার মধ্যে পড়েছি।
[৪] একইভাবে শহরের রুমালিয়ারছড়া বাজারে কাজের সন্ধানে আসার নুরুল আলম বলেন, আমি রংয়ের কাজ করি তবে কয়েক দিন ধরে কাজ না থাকায় এখন অন্য কাজ ধরতে এখানে এসেছি। এখন বাজারেও দেখি কোন কাজ নেই। তাই মারাত্মক সমস্যায় পড়েছি। জানিনা কি করবো।
[৫] শহরের রিকশা চালক আতাহার মিয়া অলস সময় কাটাচ্ছিলেন ৷আগে দিনে যেখানে ছয়-সাতশ টাকা রোজগার করতেন এখন তা তিন-চারশ টাকায় নেমে গেছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘যদি সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় কী খাবো , সংসার কিভাবে চালাব ভাবতে পারছি না ৷ কোনো জমানো টাকাও নেই যে তা দিয়ে চলব ৷ আল্লাহর উপর সব ছেড়ে দিয়েছি৷’’ সে আরো বলে সরকারি কর্মকর্তারা মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন পায়। দেশে যত দূযোর্গ আসুক উনাদের কোন সমস্যা নেই। যত সমস্যা সব আমাদের মত গরীব মানুষের।
[৬] শ্রমজীবি মানুষের অর্থ সংকট বিষয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তসলিমা রশিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন সব কিছু লকডাউন। সাধারণ মানুষ তেমন ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। আবার যাদের বাসাবাড়িতে কাজ ছিল তারাও কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও বন্ধ। তাই শ্রমজীবি মানুষ সমস্যায় আছে এটা সত্য। আমার মতে জেলার অতি দরিদ্র মানুষের একটি তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা জরুরী।
[৭] এদিকে করোনার প্রভাবে শুধু শ্রমজীবি মানুষ নয় রিক্সা চালক, টমটম চালক এমনকি ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরাও অর্থ সংকটে পড়েছেন। এ ব্যাপারে শহরের পাহাড়তলীর সড়কের টমটম চালক আজম বলেন, আগে এই টমটমের যাত্রী ছিল বেশ এখন মানুষ বিনাপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। তাই রাস্তায় ভাড়া কম। ফলে আগে দিনে কমপক্ষে ১০০০ টাকা ভাড়া পেলেও গত ২ দিন ধরে ৪০০ টাকাও পাচ্ছিনা। এতে গাড়ী ভাড়াও দিতে পারছিনা। এখন বাড়িতে নিয়ে যাব কি? খাব কি?। আর আমাদের বাড়িতে এমন কোন টাকাও জমা নেই, কাজ ছাড়া চলতে পারবো।
[৮] এদিকে টেকপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, আমি কলাতলী এলাকার একটি হোটেলে চাকরি করতাম। তবে কয়েক দিন আগে সরকারিভাবে পর্যটক আসা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের হোটেলও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। পুরো মাসের বেতনও দেয়নি। তাই এখন ঘরে বসে আছি। আমরা গরীব মানুষ কিছু না করলে খাব কিভাবে। এখন দেখছি ছোটখাট কাজও মিলছেনা। জানিনা এখন কি করবো। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ