শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২১ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৭ সকাল
আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] অসহায়দের’ নিয়ে আতঙ্কের প্রশিক্ষণও বাদ যায়নি!

ইনকিলাব :[২]  বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামজুড়ে এখন সুনসান নীরবতা। ফতেয়াবাদ-অক্সিজেন থেকে পতেঙ্গা সী-বিচ। কালুরঘাট-মোহরা-চান্দগাঁও থেকে হালিশহর-কাট্টলী-পাহাড়তলী। মোটকথায় নির্জীব। নগরবাসী নিজেদের ঘরবন্দী করে ফেলেছে যেন। আর বারো আউলিয়ার চাটগাঁর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার অসীম রহমত কামনায় আজ জুমার নামাজে মসজিদে মসজিদে দোয়া মোনাজাত ফরিয়াদ করেছেন। হে আল্লাহ! করোনাভাইরাস মহামারীর বিপদাপদ মুসিবত থেকে পানাহ চাই। মাফ-মার্জনা চেয়েছেন আকুল কান্ন্ায় চোখের পানি ঝরিয়ে! ঘরে-বাড়িতে মা-বোনেরা দোয়া-দরূদ তসবিহ তাহলিল কোরআন তিালাওয়াতে মগ্ন। বিষণ্ণ সবাই। শান্তি চাই।
এমন এক দুরবস্থার ভেতরেই নির্বাচন কমিশনের ‘উৎসব’ নাকি ভোটের! তাও আবার ২৯ মার্চ। তারিখ নাকের ডগায় এসে গেলেও বন্ধ বা স্থগিতের খবর নেই! বাহবা দিতেই হয়! তবে এই তাজ্জব ভোট ভোট কান্ড বন্ধ হোক কিংবা নাইবা হোক চট্টগ্রামের আপামর মানুষের মাঝে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ-বিরক্তি আর অনীহা ছাড়া একবিন্দু নেই আগ্রহ। ভোটের আমেজ তো আরও অনেক বড় ব্যাপার। তা ছিল না এ যাবত। ভোটের টুকটাক প্রচার ছিল। তাও থেমে গেছে।
[৩] ৭০ লাখ মানুষের মহানগর এখন মহাফাঁকা। অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন নিজগ্রামের বাড়িঘরে। আবার অনেকে ছুটির ফাঁক পেয়ে ছুটে গেছেন। সাড়ে ১৯ লাখ ভোটারের বেশিরভাগই চাটগাঁ নগরে নেই। সবার মনে দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ-শঙ্কা বাসা বেঁধেছে। করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তির উপায় কী? মানুষ চান আশা-ভরসা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর দুয়ারের বাইরে পা ফেলছেন না। পরিবার-পরিজনের স্বাস্থ্য আর সুখ-শান্তি নিয়েই সচেতন সতর্ক। সরকারের আদেশ পালনে মাঠ প্রশাসন ব্যস্ত। ভোটকান্ড-কারখানা নিয়ে ভাবনার সময় এখন!
এ প্রতিবেদন যখন লিখছি ঠিক এ সময়ই চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রিয় সংসদ সদস্য এই প্রতিবেদককে ফোনালাপের এক পর্যায়ে জানান, করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে তার এলাকাবাসী এবং দেশবাসী যাতে নিরাপদে থাকেন এ নিয়ে তার সারাক্ষণ পেরেশানি-উদ্বেগের মাঝে দিন-রাত কাটছে। কেননা বিদেশফেরত প্রবাসীদের আগমণে চট্টগ্রামে ঝুঁকির মাত্রা অনস্বীকার্য। সেদিকে তাকে দেখভাল করতেই হবে।
কাল সকালে ঘোষণা?
[৪] করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতির মাঝেই ঝুলে থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ভোটকান্ড বন্ধ বা স্থগিত ঘোষণা আসছে আগামীকাল শনিবার? সকালে? এ নিয়ে আজ শুক্রবারও বন্দরনগরীর মানুষের মাঝে বিস্ময় আর ক্ষোভ-অসন্তোষের মিশ্রণে ছিল কৌতূহল। তবে রাত অবধি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তরফ থেকে সেই প্রতীক্ষিত ঘোষণাটি আসেনি। যদিও গত বৃহস্পতিবার আভাস দেয়া হয় কাল ২১ মার্চ শনিবার ইসি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। হয়তো তাই হবে। দেশ-জাতির দুঃসময়ে নির্বাচনী ‘উৎসব’ বাতিলের ঘোষণা সহকারে প্রবল জনমতের প্রতিফলন আশা করা যায় তো। তাহলেই কেবল আসছে ২৯ মার্চে অনুষ্ঠেয় চসিক নির্বিাচন সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবে। ক্ষমতা ইসির।
অন্যদিকে চসিক ভোট বন্ধ বা স্থগিত প্রশ্নে ইসির সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় মেয়র প্রার্থী এবং দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীগণ ও চট্টগ্রামের সরকারি দলীয় এমপি, নেতৃবৃন্দ। অন্যপক্ষ বিএনপি চসিক নির্বাচন ‘এখুনি বন্ধের’ দাবি জানিয়েছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ধানের শীষে মেয়র প্রার্থী ও সিনিয়র নেতারা শুক্রবার রিটার্নিং অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন স্থগিতের স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিএনপি সিইসি বরাবর।
[৫] একটি তাৎপর্যপূর্ণ খবর। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এটি অবশ্যই ঝুঁঁকি। ইভিএম (ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করলে অবশ্যই ঝুঁকি আছে। ইভিএম সিস্টেম যদি ব্যবহার করা হয়, অনেক ব্যক্তিকে একটি মেশিন স্পর্শ করতে হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ঝুঁকির কারণ আছে। আজ বিকেলে রাজধানী ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআর-এ করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংকালে তিনি এ অভিমত দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা এটাও জানান, নির্বাচন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অবশ্য এরআগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভোট দেয়ার পরামর্শ দেন ভোটারদের।
স্থগিত চেয়ে সিইসির কাছে বিএনপির স্মারকলিপি
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চসিক নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে বিএনপি। আজ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লেখা স্মারকলিপি জমা এতে বলা হয়, সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত একজন মারা গেছেন। সরকার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনসমাগম স্থগিত করতে বলেছেন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন বলেছেন জনসমাগম না করতে। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বন্ধ। ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। নিরাপত্তার চেয়ে নির্বাচন বড় হতে পারে না। এ সময় আবদুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। দরকার ছিল আগেই করার। ইসি করেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা।
এরআগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেন। আমীর খসরু বলেন, মানুষের জীবনের চেয়ে নির্বাচন কি বড়কিছু হতে পারে? বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ ১৭ থেকে ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এখানে কিছু ঘটলে এর দায় কে নেবে? নির্বাচন এই মুহূর্তে বন্ধ করা উচিৎ। যাতে নির্বাচনী কাজে মানুষ বাড়ি বাড়ি না যায়। মেলামেশা না করে। জাতিকে বাঁচাতে হলে নিজ নিজ বাড়িঘরে অবস্থান করাই এখন জরুরি। নগরীর মেহেদিবাগে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি মানুষের ক্ষোভের কথাও জানান। তিনি বলেন, তারা (ইসি) কেন এখনো অটল সেটা তারাই বলতে পারবে? তারা কী মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে চায়? ভোটে তো শুধু নির্বাচন কমিশন নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সাংবাদিক সবাই জড়িত। কেউ তো একা নয়।
আতঙ্কের প্রশিক্ষণ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বলতে গেলে অসহায় অবস্থায় ফেলে আজ নির্বাচন কমিশন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার সমাগম ঘটিয়ে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়। চলমান ভোটকান্ডে তাও বাদ যায়নি! একেকটি কেন্দ্রে সরকারি-আধা সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় এক হাজার লোকের সমাগম ঘটানো হয়ে এ উপলক্ষে। যারা ২৯ মার্চ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডং, পোলিং অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত। এহেন পরিস্থিতির মাঝে প্রশিক্ষণ তাদের জন্য ছিল আতঙ্কের।
চোখেমুখে ভয়-শঙ্কা নিয়েই তারা ইসির আতঙ্কের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন শত অনীহা ঠেলে। ছিলেন কার্যত অসহায়। তিন ধাপে ১৬ হাজার ১৬৩ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার ৬ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয় শুক্রবার। নগরীর যে চারটি ভোটকেন্দ্রে প্রশিক্ষণের আয়োজন ছিল সেগুলো হচ্ছে, কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিডিএ পাবলিক স্কুল, খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়