চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রতিবেদন : [২] একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন রাসেল। বিআরটিএতে ৬ মাস ধরে হালকা যানের লাইসেন্সের জন্য ঘুরছেন তিনি। প্রতিবারই লাইসেন্স প্রদানের সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। তবে এটা শুনিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে লাভ হচ্ছে না তার। পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাকে।
[৩] আনোয়ার হোসেন রাসেল ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘অফিসের কাজ ফেলে বিআরএটিএ অফিসে ঘুরতে হচ্ছে। রাস্তায় পুলিশ মামলা দিচ্ছে। আর বিআরটিএতে লাইসেন্সের জন্য আসলে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।’
[৪] বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) বিআরটিএ অফিসে সরেজমিনে গিয়ে আনোয়ার হোসেন রাসেলের মত সাজিদ, আবদুল মোনাফ, রবিউলসহ আরও কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তাদের কন্ঠেও একই ক্ষোভের কথা শোনা গেল।
[৫] জানা যায়, গত এক বছর ধরে বিআরটিএ লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড দিতে না পারায় সারা দেশে পাঁচ লাখের বেশি এবং চট্টগ্রামে সোয়া দুই লাখের বেশি আবেদনকারী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। লাইসেন্সের সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করতে না পারার কারণে হাজারো লাইসেন্সপ্রত্যাশী বিআরটিএ অফিসে ঘুরছেন। লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট দিনে বিআরটিএ অফিসে আসলেই তাদের লাইসেন্স স্লিপে নতুন করে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সড়কে ট্রাফিক পুলিশকে স্লিপ দেখানোর পরও মামলা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য চালকদের হয়রানি রোধে বিআরটিএ আপাতত অস্থায়ী লাইসেন্স কার্ড দিলেও তাতেও অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
[৬] বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর সাথে লাইসেন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টাইগার আইডির চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু গত বছর প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে লাইসেন্স প্রিন্ট বন্ধ হয়ে যায়। বিআরটিএ নতুন করে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি না হওয়ায় থমকে আছে লাখো আবেদনকারীর লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম। তবে শিগগিরই এই লাইসেন্স প্রিন্ট সংকট কেটে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
[৭] এক মাস আগের এক হিসেবে জানা যায়, চট্টগ্রামে ২ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৮টি লাইসেন্স আবেদন ঝুলে আছে বর্তমানে। এর মধ্যে ২৬ হাজার ভারি, ৯৬ হাজার ৯৭১টি হালকা, ৪ হাজার ৩৭০টি মধ্যম যানবাহনের আবেদন রয়েছে।
[৮] চট্টগ্রাম মেট্রোতে মোট লাইসেন্সের আবেদন ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৪৪টি। এর মধ্যে ভারি ১৭ হাজার ৪৯৩টি, হালকা ৫৪ হাজার ২৪৪টি, প্রফেশনাল ৮৬ হাজার ৩৯৬টি, অপেশাদার ৪৬ হাজার ৮৪৮টি।
[৯]এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিসের উপপরিচালক (ইঞ্জিন) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আগের লাইসেন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিআরটিএর চুক্তি বাতিল হওয়ার পর লাইসেন্স প্রিন্ট না হওয়ার কারণে আমরা লাইসেন্স কার্ড দিতে পারছি না। নতুন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর লাইসেন্স প্রিন্ট হলে এ সংকট কেটে যাবে। আমরা এ সংকট থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি।’