শিরোনাম
◈ পুলিশকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে: আইজিপি ◈ বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানো সরকারের প্রধান কর্মসূচি: মির্জা ফখরুল ◈ উপজেলায় ভোট কম পড়ার বড় কারণ বিএনপির ভোট বর্জন: ইসি আলমগীর  ◈ আত্মহত্যা করা জবির সেই অবন্তিকা সিজিপিএ ৩.৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয় ◈ কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন ◈ গোপনে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত, জাহাজ আটকে দিয়েছে স্পেন ◈ দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন: ৬১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ◈ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী, কোটিপতি ১১৬ জন: টিআইবি ◈ ৩ বাসে ভাঙচুর, ট্রাফিক বক্সে আগুন, গুলিবিদ্ধ ১ ◈ ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারি-মোটরচালিত রিকশা চললেই ব্যবস্থা: বিআরটিএ

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৭ সকাল
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাত মার্চ : নেতা ও জনতার একাত্মতা

 

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: আজ ইতিহাসের সেই অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতা শুধু ঢাকা থেকেই নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আপন উদ্যোগে ছুটে এসেছিলেন। কেউ তাদের যাতায়াতের কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা করেনি। শুধু নেতা বলেছিলেন, ‘যা বলার সাত তারিখই বলবো’। সারাদেশ তখন এই নেতার কথা শোনার অপেক্ষায় ছিলো। তিনি ততোদিনে এই মানুষদের মনে এমন জায়গা করে নিয়েছিলেন যা ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার খবরে পূর্ব বাংলার আনাচে-কানাচে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দুই মার্চ থেকে হরতাল, অহিংস অসহযোগ, স্বাধীনতার নানা বিস্ফোরিত আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটতে থাকে। পূর্ববাংলা দ্রুতই পাকিস্তান পরিত্যাগের মানসিকতায় প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমন বাস্তবতার আশ্রয়স্থল ও কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্ভীক এক রাষ্ট্রনায়ক যিনি জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষণগণনার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্তকে জনগণের করে তুলছিলেন। জনগণ সেই নেতার মুখ থেকে উচ্চারিত নির্দেশ, করণীয় এবং পরিকল্পনা শুনতে ছুটে এসেছে এই জনমহাসমুদ্রে।

জনগণ তার সশরীরে উপস্থিতির অপেক্ষায় বসেছিলো। তিনি আসলেন দৃঢ়পদে, ঘোষণার মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনগণকে সম্বোধন করলেন। সমবেত জনতা পিনপতনের নীরবতা এবং সমর্থনের ধ্বনিতে তাকে শুনতে থাকলো। তিনি দরাজ কণ্ঠে উনিশ মিনিট বলে গেলেন রাজনীতির এক অমর কাব্য যা পৃথিবীর রাজনীতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। এই ভাষণ উপস্থিত লাখ লাখ জনতার বাইরেও সাড়ে সাত কোটি মানুষের শোনার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেতারে প্রচার বন্ধ করে দিলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কল্যাণে সারাদেশের মানুষ মুহূর্তের মধ্যেই জেনে নিয়েছিলো। নেতা জনগণের মনের কথাই দৃঢ়তার সঙ্গে নিখুঁত প্রজ্ঞার সঙ্গে বলে গেলেন, জনতাও নেতার প্রতিটি অক্ষর বুঝে নিলো। জনতা বুঝে গেলো নেতা তাদের আশ্বস্ত করেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। জনতা আরও বুঝে গেলো নেতা তাদের ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’-এর নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলো’, ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকো’ এবং ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা’, শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’ এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। এমন পরিকল্পনা মোতাবেক জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা আর কেউ দিতে পারেন না যা পারেন রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার চিন্তক নেতা যিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সৃজনশীল অভিজ্ঞতায় দক্ষ ও সমৃদ্ধ ছিলেন। একইসময়ে জনগণকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একাত্ম করতে পেরেছিলেন এবং স্বাধীন রাষ্ট্র লাভে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে নেতার প্রতি জনগণও আস্থাবান হতে পেরেছিলো। সাত মার্চ এই বিশাল জাতীয় চেতনাবোধের অর্জনটি সরবে, সবার উপস্থিতিতে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান থেকে সারদেশব্যাপী সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে।

এই দিন জনতার আশা ও আকাক্সক্ষা নেতা গভীরভাবে উপলব্ধি করে নিয়েছেন, জনতাকে নেতা স্বাধীনতার সঠিক মন্ত্র, দিক নির্দেশনা এবং করণীয় মহাযজ্ঞ হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে শত্রুপক্ষ আঘাত হানবে, তাতে তারও প্রাণ যেতে পারে। কিন্তু কর্মযজ্ঞ মুক্তিযুদ্ধ তাদের চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মুক্তি তাদের আসবেই এমন নিকট ভবিষ্যৎ ইতিহাস গড়ার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা নিয়েই সমবেত লাখ লাখ জনতা মাঠ ছাড়লেও প্রস্তুতি গ্রহণে যার যার অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। এ হচ্ছে ১৯৭১-এর সাত মার্চ জনতার মহাসমুদ্রের মহানায়ক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং সাড়ে সাত কোটি জনতার স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় একাত্মতার ঐতিহাসিক ঘটনা।লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়