বণিকবার্তা: করোনাভাইরাস এখন আর শুধু চীনে সীমাবদ্ধ নেই, বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দিন দিন এর বিস্তার ঘটছে, বাড়ছে আতঙ্ক। আর এর সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করবে এমন সরঞ্জাম, এমনকি আক্রান্তের উপশম হবে এমন ভুয়া ওষুধপথ্য বিক্রি করছে তারা। অনেকে স্বাস্থ্য সরঞ্জামের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
অসাধু ব্যবসায়ীদের এই মোক্ষম সুযোগটি করে দিয়েছে অনলাইন মার্কেট প্লেস। সম্প্রতি ইকমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন এ ধরনের লাখ লাখ পণ্য ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলেছে। মার্কিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখবে বা আক্রান্ত হলে সুস্থ করে তুলবে এমন সব পণ্যের ১০ লক্ষাধিক বিজ্ঞাপন তারা সরিয়ে ফেলেছে। এছাড়া অতিরিক্ত দাম উল্লেখ করার কারণে এ সংক্রান্ত অন্তত ১০ হাজার পণ্যের বিজ্ঞাপনও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সন্দেহজনক এই বিক্রয়কারীদের সঠিক পরিচয় জানা যায়নি।
এ নিয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকেই উদ্বেগ জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে করোনাভাইরাসের ভুয়া চিকিৎসাসহ বিভ্রান্তিকর তথ্য সমৃদ্ধ বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছিল সংস্থাটি। এ ধরনের বিজ্ঞাপন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অতিসত্বর এ ধরনের ভুয়া তথ্য অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে মুছে ফেলার পাশাপাশি এমন মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রযুক্তি জায়ান্টদের প্রতি আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অ্যামাজনে ‘করোনাভাইরাস’ লিখে সার্চ দিলে ফলাফল দেখাচ্ছে, মুখোশ, সংক্রমণ প্রতিরোধক, ভাইরাস সংক্রমণের ওপর লেখা সদ্য প্রকাশিত বই ইত্যাদি। পণ্যের বাহার দেখেই বুঝা যায় করোনাভাইরাস মহামারীকে কেন্দ্র করে অনলাইনে প্রতারণা বাণিজ্য কেমন জমে উঠেছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে ভিটামিন সি বুস্টার নামে একটি ওষুধের বিজ্ঞাপন ভাইরাল হয়ে গেছে।
১০ লক্ষাধিক ভুয়া পণ্যের বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলার পর সার্চের ফলাফলে এসব পণ্য দেখেছে বিবিসি। তাছাড়া অনেক পণ্য অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে বিক্রি হতেও দেখা গেছে। অ্যামাজন কোন কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলেছে তার তালিকা অবশ্য এখনো প্রকাশ করেনি।
উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রির একটি উদাহরণ হিসেবে বিবিসি দেখিয়েছে, ৫০ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক একজন বিক্রেতা বিক্রি করছেন ১৭০ পাউন্ডেরও বেশি দামে। এই মাস্কের একটি জনপ্রিয় বিকল্প বিক্রি হচ্ছে ৩৬ পাউন্ডে। অথচ জানুয়ারির শুরুর দিকেও এটি বিক্রি হয়েছে ১০ পাউন্ডেরও কমে।
আবার কিছু বিক্রেতা বাজারের সাধারণ মাস্ককে ‘ভাইরাস রোধী’ বা ‘করোনাভাইরাসের জন্য’ এমন ট্যাগ দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। জানুয়ারির শুরুর দিকে হাত জীবাণুমুক্তকরণ জেলের তিন প্যাকেটের একটি প্যাকেজ বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ পাউন্ডে। সেটি ৫০ পাউন্ডে উঠে গিয়েছিল, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ পাউন্ডে বেশি দামে।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্সের একজন মুখপাত্র বলেন, দাম নিয়ে কিছু করার নেই অ্যামাজনের। চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে। তবে পণ্য নামিয়ে ফেলার নীতি এবং একই সঙ্গে হঠাৎ করে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দুটোই ক্রেতার মধ্যে আস্থা সঙ্কট তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :