কাকন রেজা : পাপিয়া, সম্রাটদের নিয়ে আর কতো লিখবেন। লিখে কী লাভ। ওরা তো শুধু ভূমিকা। মূল কথা তো লুকায়িত অনেক ভেতরে। পচে যাওয়া সিস্টেমের খোসা তারা, জানান দেয় ভেতরের পচনের। একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ক্রমেই যখন ব্যর্থ হতে শুরু করে তখন সেই পাপিয়ারা ব্যর্থতার মিরর ইমেজ। ইরর সিস্টেমের সামান্যতম নজির। পচে যাওয়া সিস্টেমের দৃশ্যমান বুদ্বুদ হলো পাপিয়ারা। যারা জানান দেয়, ভেতরটা পাঁকে ভরা। তারা হলো মাফিয়াতন্ত্রের পাঁকে ফোটা বিনোদন উপকরণ, স্রেফ মেটারিয়ালস। আমরা যারা তাদের নিয়ে লিখি, তারা কিন্তু জানি, তারা বহির্বাড়ির ফটক মাত্র। অন্দর মহল অনেক দূর। আমাদের কাছে তো ‘দিল্লি দূর অস্ত’। তবুও আমরা তাদের নিয়ে মেতে উঠি কেন? এই কেনর প্রথম উত্তর নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে।
নিজেদের অক্ষমতার জ্বালা মেটাতে। মূল কথা দিল্লিতে না পৌঁছতে পারার যন্ত্রণা। তবে কেউ কেউ আছেন, দিল্লিকে গন্তব্য মানেন না, ঘৃণা করেন। তারাও লিখেন, তবে তাদের লেখার কৌশল ভিন্ন। তারা বহির্বাটি নিয়ে পড়ে থাকেন না, অন্দরের খবর নেন। অন্য যারা তাদের জন্য হুমায়ূন আহমেদের কৌশল প্রযোজ্য। হুমায়ূন আহমেদ রাগ কমাতে কাচের গ্লাস ভাঙার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাপিয়ারা হলো সেই কাচের গ্লাস। তাদের ভেঙে আমরা নিজেদের রাগ মেটাতে চাই। অক্ষমতা সৃষ্ট ব্যর্থতার রাগ। অথচ জানি, আমাদের এই জার্নি পাপিয়া পর্যন্তই সমাপ্ত। তারপর আবার যেই সেই। মাফিয়াতন্ত্রে অভ্যস্ত জীবন।
একটা ‘সেক্স মেটারিয়াল’ যখন আমাদের মতো ছা-পোষাদের কল্পনাতীত অর্থ-বিত্ত-প্রতিপত্তির মালকিন হয়ে উঠে, তখন আমরা দেখি আর আঙুল কামড়াই। আমরা তাদের সঙ্গেই পেরে উঠি না। বহির্বাটির ফটক পর্যন্তই আমাদের দৌড়। সুনীলের কবিতার বাবার মতো বলি, দেখিস একদিন আমরাও। কালে-ভদ্রে কখনো সুযোগ এলে বহির্বাটির ফুটফরমায়েশ খাটাদের উপর চোটপাট করে রাগ মেটাই। এখন যেমন পাপিয়াদের উপর। কাচের গ্লাস ভাঙা পর্যন্তই আমাদের ক্ষমতা। পাপিয়াদের মতো একটা সাধারণ মেয়ে। যার বাবা একজন গাড়িচালক। নিচুতলার একজন মানুষ, তাদের উঁচুতলায় উঠার যাত্রা তাদের একার নয়। তাদের টেনে তোলা হয়। তারা ব্যবহৃত হয়, তারা বিক্রি হয়। হতে হতে একসময় খুচরা দোকানিতে পরিণত হন। এদিক-সেদিক করে কিছু খুদকুঁড়ো জমান। তা দেখেই আমাদের আক্কেলগুড়–ম হয়। আমরা উত্তেজিত হই। উত্তেজনা বিষয়ক হরমোন নিঃসরণে খেই হারিয়ে ফেলি। ভুলে যাই পাপিয়াদের মদের বিল যদি আড়াই লাখ হয়, তাদের মনিবদের কতো। বহির্বাটির ফটকই যদি এতোটা আলিশান তাহলে অন্দরমহলের কী অবস্থা। সেই অন্দরমহল পর্যন্ত যাওয়ার সাধ্যি আমাদের নেই। সাধের সঙ্গে সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে হয় আমাদের পাপিয়াদের নিয়ে। আহা, আমাদের সাধ! হায় আমাদের সাধ্য! লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
আপনার মতামত লিখুন :