মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ সব স্থাপনাতেই অবস্থান করছে। তাদের দাবি, ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গণমাধ্যমে খবরটি দেখে আমার কাছে বেশ অবাক হওয়ার মতোই মনে হলো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে ইতিহাস বিভাগে পরপর তিনটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। অথচ বিভাগ খোলারই কোনো অনুমোদন নেননি সাবেক উপাচার্য। ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকও নেই। প্রতি শিক্ষাবর্ষে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এ সংখ্যা কোনো কোনো বছর ২০০ ও ছাড়িয়েছে। সংবাদটি আমার কাছে খুবই বিস্ময়কর লেগেছে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে কিভাবে একজন উপাচার্য এতো বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করালেন? সর্বশেষ মঞ্জুরি কমিশন তৃতীয় ব্যাচের ভর্তিকে মৌখিকভাবে অনুমোদন দিয়ে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না, ইতিহাস বিভাগও সচল হবে না- এমনটি জানাজানি হবার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগিয়েছে। এখন সেখানে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও ইতিহাস বিভাগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। এই সংবাদ অবশ্য সুখের নয় বরং কারও কারও অবিমৃষ্যকারীতার এক দুঃখজনক নজির বহন করে। কোনো বেসরকারি কলেজ এমন কা- করলে হয়তো কিছুটা মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কীভাবে এমন তুঘলকি কা- করলেন বুঝতেই পারি না। ইউজিসিও এ পর্যন্ত তেমন কোনো সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা, আমরা জানি না। তবে গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি এভাবে বারবার অনিয়ম, আন্দোলন, প্রশাসনে তালা লাগানো ইত্যাদি খবর হয়ে উঠে, তখন হতবাক হওয়া ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের বাইরেও বেশকিছু সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুমোদন রয়েছে, ইতিহাস কেন পাবে না সেটি মস্তবড় প্রশ্ন? তবে কোনো অবস্থাতেই শিক্ষকবিহীন কিংবা সংখ্যানুপাতবিহীন শিক্ষার্থী দিয়ে পরিচালিত কোনো বিভাগ মেনে নেওয়া যায় না। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ কর্তৃপক্ষ দ্রুত বৈঠকে বসে উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজে নেবেন। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো অপরাধ নেই। তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখেই ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যে এমন অনিয়ম থাকতে পারে সেটি তাদের কেন আমাদেরতো বোধগম্য নয়। এখন তাদের লেখাপড়ার যেমন স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার, বিভাগটিও চালু করে শিক্ষক নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা ছাড়া অন্য কোনো বৈধ উপায় রয়েছে বলে মনে হয় না। সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয়কে সমস্যার সমাধানে বোধহয় দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ