নিউজ ডেস্ক : অনেকেই নিয়মিত, আবার কেউ মাঝে মধ্যে পান খান। অনেকে আবার মুখ দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য পান চিবিয়ে থাকেন। এই পানের সঙ্গে সুপারি যেমন থাকে তেমনি থাকে অন্যান্য উপাদেয় সামগ্রী। দেহের ক্লান্তি,স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও খাবার হজম হতে সাহায্য করে। পান পাতা সেবনে দেহের চর্বি বা মেদ এবং ওজনও কমে। একুশে টিভি
হজমে সাহায্য করে : পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করে : খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। যার ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করে : পান খেলে পেটে বায়ু জমে কম। যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টির সুযোগ পায় না। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরিও রোধ করে। যার ফলে পেট ফাঁপে না।
উঁকুন মারে : মাথায় উঁকুন হলে গোসলের কিছুক্ষণ আগে পান পাতার রস মাথায় লাগিয়ে বসে থাকলে উঁকুন মারা যায়। এ কাজে ঝাল জাতীয় পান হলে ভালো হয়।
চর্মরোগ সারায় : দেহের কোথাও চুলকানি বা পাঁচড়া হলে সেখানে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা ভাল হয়ে যায়।
মুখ ও দাঁতের উপকার করে : দাঁতের মাঢ়ি দূষিত হলে ফুলে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে কুলকুলি করলে ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে যায়। পানের রসে এসকরবিক এসিড আছে যা একটি চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটা মুখের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।
নখের ব্যথা সারায় : অনেক সময় নখের কোণায় ব্যথা হয়। এ অবস্থায় সেখানে কয়েক ফোঁটা পানের রস দিলে ব্যথা চলে যায়।
আঁচিল দূর করে: শরীরে আঁচিল হলে তার উপর কয়েক দিন পানের রস লাগান। এতে তা ধীরে ধীরে খসে পড়বে আঁচিল।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ফলে পানে রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য।
সর্দি বের করে : বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস। পানের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে কয়েক দিন খেতে হবে। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে যাবে।
মাথা ব্যথা দূর করে : মাথা ব্যথা হলে কপালে পানের রস লেপে দিলে দ্রুত মাথা ব্যথা কমে যায়।
ক্ষত ও ব্যথা সারায় : কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেতে হবে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে এর রস খেলেও এ উপকার মিলবে।
ঠান্ডা লাগা দূর করে : ঠান্ডা লাগা সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। ঠান্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয়। এক্ষেত্রে পানপাতা গরম পানি দিয়ে ছেচে রস বের করতে হবে। এ রসের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও আদার রস মিশিয়ে খেতে হবে।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করে: পাকস্থলী গড়বড় হলে সবই উল্টে যায়। খিদেও লাগে না। পান তা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও ক্ষুধা বাড়বে।
এন্টিসেপটিকের কাজ করে : কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সেখানে পানের রস লাগিয়ে দিলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। পান পাতা পলিফেনল বিশেষত চাভিকল নামক রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ। এটা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া সেখানে ফোলাও বন্ধ করে, ব্যথার উপশম করে।
পিঠে ব্যথার উপশম করে : নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। শোয়া থেকেও হয়। মাংসপেশির টান থেকেও ব্যথা হতে পারে। ব্যথা জায়গায় পান পাতা দিয়ে সেক দিলে উপকার মেলে। এ ছাড়া পান পাতার রসের সঙ্গে নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা কমে।
মূত্র স্বল্পতা ও মূত্রকৃচ্ছতার উপশম করে : যাদের কম প্রস্রাব হয় বা প্রস্রাব করতে গেলে কষ্ট হয় তারা পান পাতার রস সেবন করে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ১টি পান পাতা ছেচে রস করে নিতে হবে। সেই রস একটু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে উপকার হবে। এতে দেহে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে ও মূত্রকৃচ্ছতা চলে যাবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : পান পাতায় আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছেকে নিতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে তাতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করুন।
শিশুদের পেট ব্যথা কমায় : পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাদতে থাকে। বড় শিশুরা পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর পর এভাবে কয়েকবার সেক দিলে পেটে ব্যথা কমে যাবে। অনুলিখন : জেবা আফরোজ