আবু হায়াত মাহমুদ : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎই তৎপর হয়েছেন কূটনীতিকরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নিবাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দূতাবাস। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসের তৎপরতা বেশী লক্ষণীয়। কূটনীতিক এ তৎপরতাকে বিরোধী দল বিএনপি ইতিবাক দেখলেও অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।
ঢাকা সিটি নির্বাচন যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় অহামরি বড় কোনো ইস্যু নয়। তা স্বত্বেও কূটনীতিকরা কেন হঠাৎ তৎপর হয়েছেন তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে চলছে কানাঘুসা। স্থানীয় নির্বাচন বলে আওয়ামী লীগের একটি অংশ একে পাত্তা না দিতে চাইলেও অপর অংশটি কিছুটা চিন্তিত বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে। তবে বিষয়টটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক জেষ্ঠ্য নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারনা শেষ পর্যায়ে। একেবারে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে এসব কূটনীতিকরা কেন হঠাৎ করে বিএনপিকে নিয়ে বৈঠক করছেন বিষয়টি বোধগম্য নয়। আবার ব্রিটিশ হাই কমিশনার বিএনপির একজন প্রার্থীর বাসায় গিয়ে কিভাবে উপস্থিত হন! বিষয়গুলো সরকারের উচ্চপর্যায় খতিয়ে দেখছে।
তিনি আরও বলেন, কূটনীতিকরা তাদের সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করছেন কিনা বা তাদের এমন তৎপরতা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কিনা সে বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন বোধ করলে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিবৃতি দেয়া হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন, কূটনীতিকরা সকল নির্বাচনের আগেই হঠাৎ করেই তৎপর হন। এ বিষয়গুলা তাৎক্ষনিক অস্বস্তির হলেও এতে সরকার বা আওমী লীগ বিচলিত নয়।
রোববার ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের পর হঠাৎ ইশরাকের উপস্থিত হোন যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন। এ সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নিচে নেমে বিটিশ হাই কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি অন্যান্য রময়র প্রার্থীর সঙ্গেও দেখা করেছি। আজকে তারই অংশ হিসেবে আমি এখানে এসেছি। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই, যাতে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে।”
এর পরেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা রোববার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বসেন। বিকাল ৪টা থেকে থেকে ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ভারত, ফ্রান্স, তুরস্ক, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২০টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থীদের ওপর হামলা, হয়রানি, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের বিভিন্ন অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে যা চলছে তার সার্বিক প্রেক্ষাপট, সিটি নির্বাচন ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের এমন তৎপরতায় বিএনপির মধ্য অনেকটাই স্বাস্ত ফিরে এসেছে বলে দলীয় একটি একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।