আমাদের সময় : আমাদের রাস্তায় আমাদের গাড়ি থাকবে সবার বাড়ি বাড়ি’Ñ এ সেøাগান নিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্দীপনায় গাড়ি অ্যাসামব্লিংয়ের কাজ শুরু করেছে পিএইচপি অটোমোবাইল। ২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সেডান কার বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটির হাত ধরে দেশে অ্যাসাম্বল করা শতশত গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অন্যান্য অর্জনের সঙ্গে নিজ দেশে চলবে নিজ দেশের গাড়িÑ এ ধারণাকেও অর্থবহ করতে চায় পিএইচপি
অটোমোবাইল। এ জন্য দেশজুড়ে প্রোটন গাড়ির বিক্রয় ও সেবাকেন্দ্র খোলার এক বড়সড় আয়োজন নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে পিএইচপি অটোমোবাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন বছরে সারাদেশে সাতটি বিক্রয় কেন্দ্র ও সাতটি সেবা কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি এবং ঢাকায় দুটি বিক্রয়োত্তর সেবাকেন্দ্র চালু আছে। এরই মধ্যে সিলেট, রংপুর ও খুলনায়ও তা চালুর কাজ চলছে। এর বাইরে সারাদেশে রহিমআফরোজের ১১টি কেন্দ্র থেকেও প্রোটন গাড়ির বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে।’
জানা যায়, অ্যাসাম্বলের পর এ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকশ গাড়ি বিক্রি হয়েছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে এ বিক্রির হার। মালয়েশিয়ার ‘প্রোটন সাগা’ মডেলের গাড়ি দেশে অ্যাসাম্বলের কারণে প্রতিটিতে তিন লাখেরও বেশি টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন ক্রেতারা। বর্তমানে প্রোটন সাগা আর প্রোটন প্রেভিÑ এ দুই মডেলের গাড়ি দেশে অ্যাসাম্বল করছে পিএইচপি অটোমোবাইল।
মোহাম্মদ আকতার পারভেজ জানালেন, প্রোটন সাগা (১৩৩২ সিসি) মডেলের একটি নতুন গাড়ির দাম পড়ছে ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। গাড়িটি আমদানি করে আগে বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৮ লাখ টাকায়। দেশে তৈরির কারণেই ক্রেতাদের এ সাশ্রয়। আবার পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি বা দেড় লাখ কিলোমিটার বিক্রয়োত্তর সেবা তো থাকছেই।
বাজারে সাড়া পড়ায় চট্টগ্রামের সাগরিকায় পিএইচপির কারখানায়ও প্রাণচাঞ্চল্য। সেখানে কর্মরত ২৫৮ প্রকৌশলী ও কারিগরদের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। আট হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের সন্নিবেশ ঘটিয়ে তাদের হাতে তৈরি হচ্ছে একেকটি গাড়ি। দিনে এক পালায় (আট ঘণ্টা) অ্যাসাম্বল করা হচ্ছে ১২টি গাড়ি। ‘প্রোটন প্রেভি’ মডেলের গাড়ি দুবছর আগে বাজারজাত শুরু করে পিএইচপি। তখন সব যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে গাড়ি সংযোজন করা হতো। তাতে খরচও পড়ত বেশি। পিএইচপির কর্মকর্তারা দেখলেন, পুরোপুরি অ্যাসাম্বলের চেয়ে গাড়ির কিছু কাজ এখানেই করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা গাড়ির রঙের কাজ শুরু করে সাগরিকার কারখানায়। পরে যন্ত্রাংশ তৈরিও শুরু হয়।
পিএইচপি অটোমোবাইল এ উদ্যোগ নেওয়ার আগে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে গাড়ি তৈরির কাজটি ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। তবে স্বপ্নের শুরুটা কীভাবে হলÑ জানতে চাইলে সবিস্তার তুলে ধরেন পিএইচপি অটোমোবাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, ‘পাঁচ বছর আগের কথা। পিএইচপি পরিচালিত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন, টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের (ইউআইটিএস) সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। অনুষ্ঠান শেষে তিনি কথা বলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে। খোঁজ নিলেন ব্যবসা-বাণিজ্যের। ডা. মাহাথির মোহাম্মদ তখন মালয়েশিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রোটনের চেয়ারম্যান। দেশে নিয়ে পিএইচপি পরিবারের সদস্যদের নিজের গাড়ির কারখানা ঘুরিয়ে দেখান। পাশপাশি বাংলাদেশেও প্রোটনের গাড়ি কারখানা নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তার অভয় পেয়ে পরের বছরই বিনিয়োগ শুরু করে পিএইচপি। এভাবেই দেশে সেডান গাড়ি অ্যাসাম্বলও শুরু হয় পিএইচপির হাত ধরে।’
তিনি বলেন, ‘এ কাজে নিজস্ব উদ্যোগের সঙ্গে সহায়ক হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের নীতি। বাজেটেও বিষয়টি উদ্যোক্তাদের অনুকূলে আছে। গাড়ি অ্যাসাম্বলের ক্ষেত্রে সরকারের এ সহায়তা অব্যাহত থাকলে দেশে ধাপে ধাপে উৎপাদন সম্ভব।’