আমাদের সময় : রাজধানীর বনানী থেকে জিয়ানহুই গাও নামে ৪৩ বছর বয়সী চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর হোল্ডিংস্থ ছয়তলা ভবনের পেছনের ফাঁকা অংশের মাটিতে তার লাশ পুঁতে রাখা ছিল। এ ভবনেরই বাসিন্দা ছিলেন গাও। গতকাল দুপুরে তার লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
জিয়ানহুই গাও ছিলেন পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে একজন সরবরাহকারী। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ধরা বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে কোনো এক সময় গাওয়ের লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। সকালে বাসার কাজের লোকজন খোলা জায়গায় কাজ করার সময় মাটি থেকে তার শরীরের অংশবিশেষ বেরিয়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
ডিএমপি গুলশান জোনের ডিসি সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসে দেখি, গোড়ালি আর মাথার চুল মাটির বাইরে বেরিয়ে আছে। এর পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পাশাপাশি চীনা দূতাবাসেও বার্তা পাঠানো হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাশ মাটি থেকে তোলা হয়। নিহতের মুখে রক্তের দাগ ছিল। পরনে ছিল ট্রাউজার ও টি-শার্ট।
গাও যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন তার বান্ধবী লিউ সিসি। যদিও তিনি অন্যত্র বাস করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, গাও ঢাকাতে একাই বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে তার স্ত্রী-সন্তান চীন থেকে বেড়াতে আসতেন। কিছুদিন আগেও তারা বেড়াতে এসেছিলেন। প্রায় ২০ দিন আগে তারা নিজ দেশে ফিরে গেছেন। সূত্রের খবর, গাওকে মাটিতে পুঁতে রাখার বিষয়টি ওই ভবনে স্থাপিত সিসিক্যামেরায় ধরা পড়েনি। কারণ সে সময় তা অকার্যকর ছিল। এ বিষয়টি আমলে রেখে তদন্ত চলছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থল ও নিহতের ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই ভবনের তিন নিরাপত্তাকর্মীকে থানায় নিয়ে গেছে। ভবনটির মালিক ব্যারিস্টার শামীম খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য থেকে বিরত ছিলেন। ভবনটির ম্যানেজার বাপ্পী সাংবাদিকদের বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালেও গাওয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। বছরখানেক ধরে তিনি এ ফ্ল্যাটে বাস করছেন বলে জানান বাপ্পী।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গাও যে ফ্ল্যাটে থাকতেন তার একটি অংশেই ছিল তার অফিস। সেখানে একটি স্যান্ডেলে কয়েক ফোঁটা রক্ত ও ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। নিহতের নাকে রক্ত, গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, কয়েকদিন আগে চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন গাও। গত এক বছরে ১৭-১৮ বার তিনি চীনে গিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার গাওয়ের স্ত্রী-সন্তানদের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম বলেন, ওই বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :