দেবদুলাল মুন্না : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পদার্থবিজ্ঞানী অজয় রায় আজ সোমবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি জানান, তার ছোট ছেলে অনুজিত রায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনুজিত জানিয়েছেন, বাবার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী গবেষণার জন্য বারডেম কর্তৃপক্ষকে মরদেহ দান করা হবে।
এর আগে চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫ নভেম্বর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন অধ্যাপক অজয় রায়। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বাড়লে দুইদিন পর তাকে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া শুরু হয়। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু জানান, সন্তানরা বিদেশে থাকায় অজয় রায়ের মরদেহ আপাতত বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো পাশে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া মেজর জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ মৃত্যুর আগে তার ছেলে অভিজিৎ হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না। এটাই আফসোস।’
তিনি বলেন, ‘ অজয় রায়ের দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়। তার লেখা কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয়। দেশিবিদেশি বহু জার্নালে অজয় রায়ের পেপার প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি পদে ছিলেন। তিনি সম্প্রীতি মঞ্চের সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন।’
ড. অজয় রায় ১৯৩৫ সালের ১ মার্চ দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রায় সব গণতান্ত্রিক ও নাগরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন।
তিনি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সেখানেই করেন পোস্ট ডক্টরেট। ১৯৬৭ সালে শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগ দেন। ২০১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে একুশে পদক অর্জন করেন অজয় রায়।