রাশিদ রিয়াজ : শুধু ভারতের ৫০ শতাংশ কেনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ৫৪ শতাংশ তরুণ যখন স্কুল ছাড়ে তখন উপযুক্ত কাজের জন্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতার ঘাটতি তার মধ্যে থেকে যায়। গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশন, দি এডুকেশন কমিশন ও ইউনিসেফ এতথ্য দিয়ে বলছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এধরনের দক্ষতার অভাব তাদের মধ্যে থেকেই যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় প্রতিদিন লাখ খানেকের মত তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও তাদের অর্ধেক দক্ষতা না থাকায় উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
বিবৃতিতে হেনরিটা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এক জটিল সংকটময় পরিস্থিতিতে সম্ভাবনাময় তরুণদের সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা দারিদ্র দূর করে দিতে পারে। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে। তরুণদের মধ্যে হতাশা আরো বাড়বে এবং অন্য অঞ্চলে এই সম্ভাবনাময় তরুণরা হারিয়ে যাবে। গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক জাস্টিন ভ্যান ফ্লিট বলেন, এ পরিস্থিতি সংকটজনক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারি বিনিয়োগের অভাব, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি না থাকা, সুশীল সমাজের অক্ষমতা তরুণ প্রজন্মকে ব্যর্থ করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমবাজারেও পরিবর্তন আনতে দিচ্ছে না।
এদিকে ইউনিসেফ বলছে দক্ষিণ এশিয়ার ১৮০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৪ বছরের কম যারা আগামী ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ তরুণ গোষ্ঠী হিসেবে এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্যে অপেক্ষা করবে। অন্যদিকে হেনেরিটা বলেন বিশ্বের কাজের ধরণ দ্রুত পরিবর্তনশীল হওয়ায় সরকারগুলোর উচিত ভাল বিনিয়োগ ও আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তরুণদের জন্যে অপূর্ব সুযোগ তৈরি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়াই বিশ্বের উদাহরণ সৃষ্টি করবে। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব যদি একাট্টা হয়ে বুদ্ধিমানের মত কাজ করি। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ।
ভারতের মত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশগুলোতেও আরেক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দক্ষ প্রশিক্ষণার্থীর অভাব। সঠিক সময়ে সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও রয়েছে প্রচণ্ড অভাব। শুধুমাত্র সময় অতিবাহিত করে সার্টিফিকেট অর্জনের মত শিক্ষা ব্যবস্থাও দায়ী। ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে ভারতের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পুরোনো পাঠ্যক্রম অনুসরণ করছে। রয়েছে অবকাঠামো এবং গুণগত শিক্ষা পদ্ধতির সংকট। আর এ সংকটই শ্রমবাজারের চাহিদা মত তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই ধরনের অব্যবস্থা রয়েছে সরকারগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেও। ইউনিসেফ এসব সংকট নিরসনে কি ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। নারী অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থার তাগিদ দিয়েছে। তরুণদের ধারাবাহিক বহুমুখী দক্ষতার মধ্যে দিয়ে উদ্যোক্তার বিকাশের কথাও বলেছে। শিক্ষক স্বল্পতা কমিয়ে শ্রমঘন শিল্পে যোগানের মত তরুণ শ্রম গড়ে তোলার জন্যে নতুন প্রযুক্তির সান্নিধ্যেও যেতে বলেছে ইউনিসেফ।