রাশিদ রিয়াজ : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে তার দেশের ‘কোনো লেভেলেই’ আলোচনা হবে না। এ ছাড়া, তেহরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের যে নীতি ওয়াশিংটন গ্রহণ করেছে তাও ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। খামেনেয়ী মঙ্গলবার তেহরানে আলেমদের উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ক্লাস নিতে গিয়ে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসার অর্থ হবে ওয়াশিংটনের অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তিনি বলেন, আলোচনায় বসলে ওয়াশিংটন তার দাবিদাওয়া ইরানের ওপর চাপিয়ে দেবে; এছাড়া, আমেরিকা বলে বেড়াবে তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতিতে কাজ হয়েছে।”
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “ঠিক এ কারণেই ইরানি কর্মকর্তারা- সে প্রেসিডেন্ট হোন অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী- আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা ঘোষণা করেছেন। আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় কোনো ধরনের আলোচনা প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী- কোনো লেভেলেই হবে না।”
তবে আলোচনার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেননি খামেনেয়ী। তিনি বলেন, “আমেরিকা ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত যে পরমাণু সমঝোতা থেকে গত বছর বেরিয়ে গেছে অনুশোচনা প্রকাশ করে তাতে যদি সে ফিরে আসে তাহলে ওই সমঝোতার গঠনকাঠামোর আওতায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে বহুপক্ষীয় আলোচনায় বসবে তেহরান। এর অন্যথায় নিউ ইয়র্ক বা অন্য কোথাও কোনো মার্কিন কর্মকর্তারা সঙ্গে ইরানের কোনো কর্মকর্তা আলোচনায় বসবেন না।”
চলতি মাসের শেষ দিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের অবকাশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বৈঠকে বসতে পারেন বলে যখন পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপক জল্পনা চলছে তখন এ কঠোর নীতি-অবস্থান ঘোষণা করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
২০১৫ সালে পরমাণু সমঝোতায় সই করে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে ওই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে তেহরানের ওপর সেসব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার আজকের ভাষণে আরো বলেন, “আমেরিকানরা একবার নিঃশর্ত আলোচনার কথা বলে আরেকবার ১২টি শর্তে আলোচনা হতে পারে বলে ঘোষণা করে। এ ধরনের বক্তব্য হয় তাদের অসংলগ্ন নীতির বহিঃপ্রকাশ অথবা প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।” তিনি বলেন, “অবশ্য ইরান বিভ্রান্ত হবে না। কারণ, আমরা আমাদের চলার পথ বেছে নিয়েছি এবং আমরা জানি আমরা কি করছি।”
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বিগত ৪০ বছর যাবত আমেরিকা ইরানকে পরাভূত করার লক্ষ্যে নানা ধরনের ছলচাতুরি ও কূটকৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা উল্টো ইরানের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। এবারও আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় আমেরিকার কথিত সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হবে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পারসটুডে