নিজস্ব প্রতনিধি: আজ ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘‘পেশাজীবি নারীদের সাথে মতবিনিময়’’ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম।
সভায় সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, আমাদের সকল সমস্যার পেছনে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা দায়ী। এছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক, দৃষ্টিভঙ্গিগত, পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে নারীদের ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আজকের আলোচনায় অনেক পেশাজীবি নারী কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন ও সমস্যা সমাধানের বিভিন্ উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মহিলাপরিষদকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজকে নারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করছেন। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে তাদের অবদান অনেক। এই সকল নারীদের অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে লড়াই করে চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত নারীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজেদের যুক্ত করেছেন। চাকরির জন্য নিজেদের যোগ্য করে তুলতে একজন নারীকে পরিবারের সাথে, জেন্ডার বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার সাথে, চলার পথে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা পর একজন নারী চাকরির জন্য নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে কতটা বিকশিত করার সুযোগ পান সেটি আমাদের দেখতে হবে। অনেক নারীরা আছেন পরিবার সামলানোর জন্য, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা না থাকায় চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীরা কি ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, এগুলি মোকাবেলায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সরকারের সাথে কিভাবে অ্যাডভোকেসি করতে পারে সেবিষয়ে আলোচনার জন্য উপস্থিত সকল পেশাজীবি নারীদের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন নারী বান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে, পরিবারে কর্মজীবি কর্মজীবি নারীকে যোগ্য মর্যাদা দিতে এবং কর্মস্থল নারী বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে আজকের আলোচনা হতে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে আমাদের একসাথে কাজ করা দরকার। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পেশাজীবি নারীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের দীর্ঘ সংগ্রামে অন্যান্য নারীর সাথে পেশাজীবী নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বিভিন্ন পেশায় নারীর অন্তর্ভূক্তি, তাদের ভূমিকা পালন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তার সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১-৩০ তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক মাস পালন করছে। তারই অংশ হিসেবে আজ পেশাজীবী নারীদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা কর্মজীবী পেশাজীবী বোনদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদে কাজ করার অনুকূল পরিবেশ, রাস্তায় চলাচলে নিরাপত্তার অভাব, সন্তান লালন পালনের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, গণপরিবহনে নারীবান্ধব পরিবেশ ও ব্যবস্থা, কর্মজীবীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা এখনও তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপের তথ্যমতে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও শ্রমবাজারে তেমনভাবে বাড়ছেনা। আমরা মনেকরি শ্রমবাজারে নানা অসুবিধা ও সামাজিক পারিবারিক ক্ষেত্রেও নারীর অধঃস্থনতা এর মূল কারণ। তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কর্মজীবী পেশাজীবী নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন পেশাজীবি নারীরা তাদের দাবীতে কিভাবে সোচ্চার হবেন এবং নিজেদের মধ্য থেকে একত্রিত হয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কিভাবে দাবী দাওয়া তুলে ধরবেন তা ভাবতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন পেশার নারীরা তাদের পেশাগত জীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের দিক, নারীর প্রতি সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে নারীকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা, সাইবার ক্রাইম, শিশুর প্রতি নির্যাতন, গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতা, এসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ প্রদান করেন।