খালিদ আহমেদ : নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন সোমবার বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে এই অভিমত দেন। তিনি এই হামলার ঘটনায় হতভম্ব হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
রাঙ্গামাটিতে রোববার সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল দলের ওপর একই দিনে দু দুটো হামলার ঘটনায় উদ্বেগের পাশাপাশি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে তাকে। এই হামলার ঘটনায় এক সেনা সদস্য নিহত এবং আরো একজন আহত হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।
নব্বইয়ের দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সেনাবাহিনীর ওপর বড় কোন হামলার কথা শোনা যায়নি। এই হামলাকে তিনি অ্যামবুশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
গত প্রায় বছর-খানেক যাবত পার্বত্য এলাকায় আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে পরপর বেশ কয়েকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের জুনে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড এবং তার পরদিনই আরো পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর গত কয়েক মাসে পরপর আরো কয়েকটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসবের পেছনে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইকেই দায়ী করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রোববারের ঘটনা সম্পর্কে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে কাউকেই সন্দেহ করা হয়নি। তবে বিবিসির সাথে আলাপকালে একাধিক পর্যবেক্ষক অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন আরাকান আর্মি নামে মিয়ানমারের সশস্ত্র একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দিকে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে তিনি ওই হামলা সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি পেয়েছেন। ছবি দেখে তার মনে হয়েছে হামলাকারীরা দেশের বাইরে থেকে আসা। তিনি বলেন, তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিলো। এই অস্ত্রগুলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের হাতে দেখা যায়। এছাড়া তাদের পরনে ইউনিফর্ম ছিলো। তাদের গড়ন দেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর সদস্য বলে মনে হয় না।
স্থানীয়রা জানান, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী এলাকায় এই হামলা হয়েছে । সেখানে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গোষ্ঠীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দুই বছর আগে রাজস্থলী উপজেলা থেকেই আরাকান আর্মির অন্যতম শীর্ষ নেতা রেনিন সোয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। সাম্প্রতি সেখানে মগ লিবারেশন পার্টি নামে নতুন একটি দলের সদস্যদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, আরকান আর্মি বেশ কিছুদিন ধরে পার্বত্য এলাকা থেকে তাদের সদস্য সংগ্রহ করছিলো। তিনি বলেন, আরাকানের বৌদ্ধদের সাথে পার্বত্য এলাকার কিছু কিছু জনগোষ্ঠীর চেহারা এবং গড়নে অনেক মিল রয়েছে। অনেক সময় তাদের দেখে আলাদা করা কঠিন বলেও জানান তিনি।
ব্রিগেডিয়ার হোসেন মনে করেন, এটা ইচ্ছাকৃত উস্কানি হতে পারে। যাতে সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান শুরু করে। এর ফলে তাদের সদস্য সহজ হবে। তবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আরাকান আর্মির কিছু সদস্যকে ধরে মিয়ানমারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো, তার বদলা হিসাবেও এই হামলা হতে পারে।
সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী এই উস্কানিতে সাড়া দিলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন না হলেও উৎকণ্ঠার অনেক কারণ রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল করেছে। এই ঘটনার পর তারা যদি আবার শক্ত অবস্থান নেয়, তাহলে আরেক ধরণের সমস্যা হতে পারে।
কেএ/এসবি