মাজহারুল ইসলাম : গাজীপুরে সুমি আক্তার (২৩) নামে এক নারী গামের্ন্টস কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরে ঘরের ভেতর ড্রেসিং টেবিলের বক্সে পলিথিনে মোড়ানো ওই নারী দেহের ৫টি খণ্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কেউ কেউ পচে যাওয়া ওই দেহের অংশকে কোরবানির গোশত বলে প্রচার করে।জাগো নিউজ
এ অবস্থায় খন্ডিত অংশ গুলো মানুষের দেহের কিনা তা নিশ্চিত হতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, পলিথিনে থাকা খণ্ডিত মাংস মানুষের দেহের।এগুলো দেহের চামড়া ও খণ্ডিত মাংস বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
এ ব্যপারে শ্রীপুর থানার এসআই রাজীব কুমার সাহা বলেন, খণ্ডিত অংশগুলো ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমি আক্তারের বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুমি শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার সাবলাইম গ্রিনটেক নামের পোশাক কারখানার অপারেটর ছিলেন। তিনি তার স্বামী মো. মামুনের সঙ্গে আসপাডা মোড় এলাকার নাইম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ।এসআই রাজীব আরও বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে মামুন ও সুমির বিয়ে হয়। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো। মামুন ওই এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। ছোট বোন বৃষ্টিও সুমির সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করেন এবং একই এলাকায় পৃথক বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি হয়।শুক্রবার তাদের একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো।
রাজীব আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে সুমি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা বলেছি্লেন।শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন মোবাইলে সুমির সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তারা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বাড়ি পৌঁছেও তারা একাধিকবার বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইলে ফোন দিয়ে নম্বর ২টি বন্ধ পান।
বৃষ্টির বরাত দিয়ে এসআই রাজীব কুমার বলেন, ময়মনসিংহ থেকে শনিবার গাজীপুর ফিরে এসে বৃষ্টি ও তার স্বামী সুমির বাসায় যান। বাসায় কারো সারাশব্দ না পেয়ে তারা তালা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। কাউকে না পেয়ে কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে যান। ফেরার পথে আসপাড়া মোড়ে ভগ্নিপতি মামুনের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এরপর মামুনকে সঙ্গে নিয়ে তারা আবারও ওই বাসায় রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যে মামুন তাদের ফেলে পালিয়ে যায়।এরপর বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ফিরে যান।বাড়ি গিয়ে সুমিকে না পেয়ে আবারও মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসব ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ঈদের দিন সোমবার বিকেলে স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টি আবারও সুমির বাসায় যান।তারা ওই সময় ঘরে তীব্র দুর্গন্ধ টের পান।এ সময় তারা ঘরের ড্রেসিং টেবিলের নিচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখতে পান।
এরপর ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে ৪টি পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের ৫টি টুকরা দেখতে পান। তবে সেখানে মাথা বা হাত-পা ছিলো্ না। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি শ্রীপুর থানা পুলিশকে জানালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে খণ্ডিত টুকরাগুলো উদ্ধার করেপুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :