আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : ভদ্রলোক এলেন। সবকিছু ব্যর্থ দেখে ভয়ংকর চেহারা নিয়ে ছেলেসহ আমার কামরায় এসে দাঁড়ালেন একদিন। আমার বসার অনুরোধ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ধমকের স্বরে বললেন, ‘জানেন আপনার মতো একশোটা মাস্টারকে আমি কিনতে পারি...’ ধমকটা সহ্যশক্তির বাইরে। ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আপনি কি জানেন, আপনার মতো একশোটা অশিক্ষিতকে আমি লেখাপড়া শেখাতে পারি?’ আমি জানতাম আমাদের দুজনের কারো পক্ষেই নিজ নিজ দাবি বাস্তবায়নের ক্ষমতা ছিলো না। সম্মানের সংকটে পড়েই আমরা এই কথাগুলো বলেছিলাম।
ভদ্রলোক রাগে প্রায় সংবিৎ হারিয়ে ফেললেন। শান্ত গলায় আমি তাকে থামতে বললাম। আমার উত্তরের জন্য ভদ্রলোক তৈরি ছিলেন না। হঠাৎ প্রচ- ঘা খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে গেলেন। নিজেকে খানিকটা শান্ত করে নিয়ে বললাম, ‘আপনি আমার মতো কতোজন শিক্ষককে কিনতে পারেন জানি না। কিন্তু যে ছেলের জন্য আপনি এতোসব করতে চাচ্ছেন, তাকে স্বচ্ছন্দে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। ওর লেখাপড়া হবে না। যে ছাত্র একবার জানতে পারে তার শিক্ষকেরা তার বাবার টাকায় কেনা চাকর, সে মানুষ হয় না।’
সেদিন শিক্ষকসত্তার অহংকারে গলা উঁচু করে তাকে কথাগুলো বলেছিলাম, কিন্তু আজ পেছনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমার নয়, সারাদেশে সবখানে তার দম্ভই আজ জয়ী হয়ে গেছে। জাতির শিক্ষকেরা আজ ছাত্রদের বাবার পয়সায় কেনা ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাতারে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। হায় শিক্ষকতা! যে শিক্ষাকে একদিন জীবনের সর্বোচ্চ বৈভব ভেবে অন্ধের মতো ছুটে গিয়েছিলাম, আজ তা কেবলই প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। কেবলই একটা ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপার! সূত্র ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’। ফেসবুক থেকে