ডেস্ক রিপোর্ট : বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাজ করাতো, আবার মারধর করতো। ‘ওরা গরম ভাত খায়, আমাকে কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খেতে দেয়।’ ‘আমি আমার মায়ের কাছে যাবো’।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা ১১টায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের পশ্চিমটেংরী কাঁচারীপাড়া মহল্লার আশ্রয়দাতা গৃহবধূ ববিতা বেগমের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিল খোদেজা খাতুন (৯)।
খোদেজা সিরাজঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার খুঁকনি ইউনিয়নের তাঁতশিল্পের কারিগর বাবলু প্রমাণিক ও আলেয়া বেগম দম্পত্তির সেজো মেয়ে বলে জানা গেছে। সে খুঁকনি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।
মেয়েটি অশ্রুশিক্ত চোখে বলে, একসপ্তাহ আগে আমার খালাতো বোন ত্ববা আপু আমাকে গত শুক্রবার (২৪ মে) বেড়ানোর কথা বলে ঠাকুরগাঁও নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে বাড়ির কাজ করতে বলতেন, আর গালিগালাজ ও মারধর করতেন। বুধবার (২৯ মে) সকালে ত্ববা আপুকে একজন মুরুব্বির কাছে এক হাজার টাকা দিতে দেখেছি। পরে ওই মুরুব্বি আমাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রেনে করে পার্বতীপুর নিয়ে আসে। সেখানে ঢাকার একটি ট্রেনে (লালমনি এক্সপ্রেস) আমাকে একটি সিটে বসিয়ে ট্রেন থেকে ওই মুরুব্বি নেমে যান। কিছুক্ষণ পর আমাকে একা দেখতে পেয়ে ট্রেনের লোকজন (অ্যাটেনডেন্ট, রেলওয়ে গার্ড, ও রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ) ওই ট্রেন থেকে নামিয়ে দেন।
গৃহবধূ ববিতা বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার দুপুরে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে আমি আমার মেয়ে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর ঢাকাগামী একটি ট্রেন থেকে ওই ট্রেনের পরিচালক ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঢাকাগামী ট্রেন থেকে ওই মেয়েটিকে নামাতে দেখে স্থানীয় কিছু ট্রেনযাত্রী জটলা বাধা স্থানে এগিয়ে যান। এসময় মেয়েটি ভয়ে নিজের নাম, তার বাবার নাম আর বাড়ি এনায়েতপুর ছাড়া কিছুই বলতে পারছিল না। এসময় ট্রেন পরিচালক জানান, সিরাজগঞ্জের কোনো ট্রেনে তাকে তুলে দিতে হবে। আমি তাদের জানাই, আমার বাসা ঈশ্বরদীতে। আমি ঈশ্বরদীতে যাচ্ছি। এসময় ট্রেনটির পরিচালক আমাকে অনুরোধ করে বলেন- সকালে আমি যেন মেয়েটিকে নিয়ে যাই এবং ঈশ্বরদী থেকে কোনো একটি ট্রেনে উঠিয়ে দেই। এদিকে ট্রেনটি রাতে ঈশ্বরদী পোঁছালে শিশুটি মেয়ে দেখে স্টেশনে একা ছেড়ে আসার সাহস হয়নি। আর তাই বাসায় নিয়ে আসি। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অবগত করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের সঙ্গে বাংলানিউজ যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করে। এসময় তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
খুঁকনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মল্লিক চাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ওই গ্রামে গিয়ে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিবারের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে জানান, চারটি মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটনে দিন পার করছিলেন বাবলু-আলেয়া পরিবার। পাশের গ্রামের এক মেয়ে থাকে ঠাকুরগাঁও। সেখানে মেয়েটিকে বাড়ির কাজ করানোর জন্যে পাঠানো হয়েছিল। মেয়ের খবর পেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাবা ও নানা ঈশ্বরদীতে ইতোমধ্যে রওনা হয়েছেন।
ওই মেয়ের বাবা বাবলু প্রমাণিক বলেন, আমার সেজো মেয়েকে তার দুঃসম্পর্কের খালাতো বোন বেড়ানোর উদ্দেশে গত শুক্রবার (২৪ মে) তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও নিয়ে গেছেন। পরে জানতে পারি বুধবার (২৯ মে) সকাল থেকে মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকীর বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পশ্চিমটেংরী থেকে ঈশ্বরদী থানা থেকে মেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ট্রেনে করে রাত ১২টায় ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তাকে নিয়ে আসা হয়। পরে মেয়েটিকে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরদীর উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যায় বাবা বাবলু প্রমাণিকের হাতে তার মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
উৎসঃ বাংলানিউজ