জাবের হোসেন : প্রথম সারির পাক দৈনিক ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোটের প্রচারের ফোকাসটাই ছিল পাকিস্তানকে শূলে চড়ানো। পাকিস্তানের সমালোচনা করা। সেই পথ থেকে উনি এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবেন, এটা আশা করাটাই হবে অবিবেচকের কাজ। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়া প্রসংঙ্গে একথা বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আনন্দবাজার
পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা-সহ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের রাষ্টপ্র্রধানদের ডাকা সত্তে¡ও পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে যে আমন্ত্রণ জানায়নি দিল্লি, তাকে খুব একটা বড় করে দেখতে চাইছে না ইসলামাবাদ। কুরেশির কথায়, সেটাই তো আমাদের প্রত্যাশিত ছিল।
মাহমুদ কুরেশি এও বলেছেন, এর পরেও তাদের লক্ষ্য বদলায়নি। সেটা হল দিল্লির সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি মিটিয়ে ফেলা। মিটিয়ে ফেলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ডাক পাননি ইমরান খান ভারতে আসার অনুরোধ জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে কিরঘিজস্তান ও মরিশাসের রাষ্ট্রপ্রধানকেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রনালয় সোমবার রাতে এই খবর দিয়ে বলেছে, যা হয়েছে তা সরকারের প্রতিবেশী প্রথম নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।
যদিও ১০ এপ্রিল পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা মেটানোর জন্য মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এলেই ভাল হয়। ভোটের ফল বেরনোর দিনই টুইট করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভিনন্দন জানান ইমরান। তার দু’দিন পর, গত শনিবার মুলতানে ইফতারের নৈশভোজে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জানান, দিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তৈরি হয়েই রয়েছে ইসলামাবাদ। পরের দিন মোদীকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান পাক প্রধানমন্ত্রী।
এত কিছুর পরেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ইমরানকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভাবী এনডিএ সরকার ইসলামাবাদকে এড়িয়ে চলারই ইঙ্গিত দিতে চাইছে। তাদের মতে, পাক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানোর মাধ্যমে সরকার বার্তা দিল, ২০১৪ থেকে ২০১৯, এই পাচ বছরে খাতায়-কলমে প্রতিবেশীদের নিয়ে তার পছন্দ-অপছন্দ বদলে গিয়েছে। কারণ, পাচ বছরে আগে মোদী যখন প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন তার শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য সার্ক জোটের দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। এসেওছিলেন শরিফ। এ বার সার্ক জোটের নেতাদের না ডেকে আমন্ত্রণ জানানো হল বিমস্টেক জোটের রাষ্ট্রপ্রধানদের।
কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে? ভারতে ব্যাখ্যা, কিরঘিজ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এখন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান। আর মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী এ বার প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধান অতিথি।
অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চিফ অফ প্রোটোকল নাগেশ সিংহ। তার ভিত্তিতে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানে আসছেন বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্টরা। তবে মায়ানমার থেকে শেষ পর্যন্ত কে আসবেন আউং সান সু চি নাকি প্রেসিডেন্ট উইন মাইয়িন্ট তা এখনও সুনিশ্চিত হয়নি। সম্পাদনা- কায়কোবাদ মিলন