হ্যাপি আক্তার : অরক্ষিত নদীপথ দিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে চোরাই সোনা। তাদের পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আনা হচ্ছে সোনার বিস্কুট ও বার। গোয়েন্দাদের নজর এড়াতেই এই পন্থা অবলম্বন করেছে চোরাচালানকারীরা। নতুন এই কৌশল উদ্বেগ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। চোরাচালানে অভিযুক্ত একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন ডিরেক্টর অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের (ডিআরআই) গোয়েন্দারা। আটককৃত ছাত্রের ব্যাগ থেকে মিলেছে প্রচুর চোরাই সোনা। তাকে জেরা করে বসিরহাটের আরেকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে মিলেছে আরো সোনা। সব মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ১৮ কেজি সোনা। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫.৭৭ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে ডিআরআই। বর্তমান।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিলো, সোনা চোরাচালানে জড়িতরা এই কাজে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। তাদের বেশিরভাগই সীমান্ত পাশর্^বর্তী এলাকার বাসিন্দা। মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে গরিব পরিবারের ছাত্রদের এই কাজে নিয়ে আসছে তারা। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট সীমান্ত পাশর্^বর্তীর একাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কাজ করছে। খবর পাওয়া মাত্রই ওই এলাকায় নজরদারি শুরু করেন তারা। চলে সড়ক ও নদীপথে তল্লাশি। বুধবার বসিরহাটের ইতিন্দানগর ফেরিঘাটে স্কুল ব্যাগ নিয়ে এক কিশোরকে নামতে দেখেন গোয়েন্দারা। সন্দেহের বশেই তাকে আটক করা হয়। ব্যাগ খুলতে দেখা যায়, তাতে বই ঠাসা। বইয়ের নীচে রয়েছে সোনা। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১২.৮৬ কেজি সোনা। তাকে জেরা করে অন্যত্র আরো সোনার হদিশ পাওয়া যায়। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় পাঁচ কেজি সোনা। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরো একজনকে।
তদন্তে নেমে ডিআরআই জেনেছে, এই সোনা চোরাপথে সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তারপর তা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকেছে এরাজ্যে। জলপথের এক বিরাট অংশ অরক্ষিত। সেই পথকেই ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, একের পর এক অভিযানে পাচারকারীদের অনেকেই ধরা পড়েছে। সেই কারণেই ছক পাল্টে তারা এখন স্কুল পড়ুয়াদের ব্যবহার করছে। সীমান্তের ওপারে তাদের পাঠানো হচ্ছে বইয়ের ব্যাগসহ। ওই ব্যাগে রয়েছে বিশেষ ধরনের পকেট। তার মধ্যেই লুকিয়ে আনা হচ্ছে চোরাই সোনা। অনায়াসে তারা বাংলাদেশে যাচ্ছে এবং সোনা নিয়ে এসে পৌঁছে দিচ্ছে এপারের চোরাকারবারিদের।
যে শিক্ষার্থী এই কাজে হাত পাকিয়েছে, তারাই অনেক সহপাঠীকে টাকার লোভ দেখিয়ে এই পথে নামাচ্ছে। এই এলাকার কোনো কোনো শিক্ষার্থীদের এই কাজে নেমেছে, তা জানার চেষ্টা করছে ডিআরআই। সম্পাদনা : কায়কোবাদ মিলন