শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া থেকে : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জাল পাসপোর্ট ও ভিসা স্টিকার লাগিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া কুমিল্লার মিজান গ্রেপ্তারে বেরিয়ে আসছে নানা অজানা কাহিনী। গত ১৬ মে ইমিগ্রেশনের ফাঁদে পড়ে গ্রেপ্তার হন জাল পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্টিকারসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। গ্রেফতার হওয়ার পরপরই অর্থ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে চাইলেও সে কাজ আর হয়ে ওঠেনি। অপরাধ জগতের সম্রাট মিজান এর হাতে হাতকড়া পরিয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগ বুঝিয়ে দিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত নয় অপরাধী যতই বড় হোক না কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা।
স্বল্পশিক্ষিত মিজান বহু কষ্টে পরিবারের অভাব ঘোচাতে ১৪/১৫ বছর আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের এর কাজে নিয়োজিত থেকে জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতে। বাড়তি উপার্জনের আশায় জাল পাসপোর্ট, ভিসা সহ কয়েক বছর আগে গ্রেফতার হয়। সেই সময় মালয়েশিয়া অভিবাসন বিভাগ থেকে ব্ল্যাক-লিস্ট করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে ব্ল্যাক লিস্ট কাটিয়ে স্ত্রীর মাধ্যমে আবারো মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে মিজান।
আবারো অপরাধ জগতে প্রবেশ করে স্ত্রীর নামে কোম্পানির লাইসেন্স করে অবৈধ বাংলাদেশিদের ভিসা করে দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নেয় ৪০ লক্ষ টাকা। আর সেই টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তারই কোম্পানিতে কর্মরত আরেক বাংলাদেশিকে ফাঁসিয়ে দিতে মালয়েশিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সোলাইমান টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।
তার কোম্পানিতে ভিসা করতে দেওয়া বাংলাদেশিরা নিরুপায় হয়ে চোখ বুজে অপেক্ষা করছিল কখন আবারো সোলাইমান মালয়েশিয়ায় ফিরে আসে। তারই ফাঁকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে মাস্টার মাইন্ড মিজানের বহু অপকর্ম। আসলে সোলাইমান টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়নি। আবারো ঐ সব বাংলাদেশিদের কাছে টাকা নেওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে মিথ্যাচার করে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের জাল ভিসা, পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই করতো এই মাস্টার মাইন্ড মিজান। জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকা করে নিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই এর জন্য মিজানের জুড়ি ছিল না। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জনের কারণে মিজান অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায় মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ায় নিজের নামে- বেনামে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স এর মাধ্যমে ধরাকে সরা জ্ঞান করে ফেলে মিজান।
প্রবাসীদের রক্তের বিনিময়ে সঞ্চিত অর্থ আত্মসাৎ করার কারণে গত ১৬ মে অভিবাসন বিভাগের অভিযানে মিজানকে গ্রেপ্তারে হতে হয়েছে বলে জানান একাধিক প্রবাসী। মিজান এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যেন মিজানকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।