নিউজ ডেস্ক : প্রায় হাজার বছর আগে মুসলিমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর যেসব বই লিখে গেছেন তার প্রায় প্রতিটিতেই চোখের চিকিৎসার কোন না কোন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। যেহেতু সরাসরি মানব চোখের বদলে পশুর চোখের ওপর তাদের গবেষণা করতে হয়েছে, তাই তাদের গবেষণারও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। সেযুগে, মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদকে অবমাননাকর হিসেবে দেখা হতো। তবুও, এই বাধাগুলো মানব চোখের ব্যবচ্ছেদের আদিতম চিত্রগুলো তৈরি করা থেকে গবেষকদের থামাতে পারেনি।
দশম থেকে তেরশ শতকের মুসলিম চক্ষু সার্জন বা চক্ষুরোগের চিকিৎসকেরা চোখের অস্ত্রোপচার, ব্যবচ্ছেদের পাশাপাশি চক্ষু বিষয়ক গবেষণা এবং তার ফলাফলগুলো চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন পড়ার বইয়ে লিখতেন এবং ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতেন। বিংশ শতকের বিখ্যাত জার্মান প্রফেসর চিকিৎসাবিদ জুলিয়াস হির্চবার্গের মতে সেসময় চক্ষুরোগের চিকিৎসার ওপর প্রায় ত্রিশটির মত টেক্সট বই লেখা হয়েছিল, যার মাঝে ১৪ টি এখনো বর্তমান।
এসব বইতে কনজাংটিভা, কর্নিয়া, ইউভিএ এবং রেটিনার মত আধুনিক বিভিন্ন টার্ম/শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। ট্র্যাকোমা বা চোখের পাতার সংক্রামক রোগের বিভিন্ন অস্ত্রোপচার ছিল খুবই সাধারণ চিকিৎসার মত। গ্লুকোমার চিকিৎসা বা চোখের ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যাবার চিকিৎসা ছিল খুব জনপ্রিয়। তবে, চক্ষুরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুসলিমদের সবচাইতে বড় অবদান হলো ক্যাটারাক্ট বা চোখের ছানি অপসারণ।
ছানির আরবী নাম হলো, "আল-মা আল-নাযিল ফিল'আইন" কিংবা, চোখের ভেতরে পানি জমে যাওয়া। চোখের ভেতরে পানি জমে চোখকে আর্দ্র এবং দৃষ্টিশক্তিকে অস্পষ্ট করে তোলাকেই ছানি নামে অভিহিত করা হয়। শ শতকের কিছু হিব্রু অনুবাদে পাওয়া যেত। ১৯০৫ সালে জার্মান প্রফেসর হির্চবার্গ জার্মান ভাষায় বইগুলোর অনুবাদ শুরু করেন।
ইবনে ঈসাই কিন্তু একমাত্র চক্ষু সার্জন নন যিনি চোখের বিভিন্ন রোগকে অন্যান্য অসুখের বলে বিবেচনা করেছেন। আবু রুহ মুহাম্মদ ইবনে মনসুর ইবনে আব্দুল্লাহ, যিনি মূলত পরিচিত আল-জুরজানি নামে। পারস্যের অধিবাসী জুরজানি ১০৮৮ খ্রিস্টাব্দে 'দ্য লাইট অফ দ্য আই' নামে একটি বই লেখেন। এই বইয়ের একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় তিনি এমন সব রোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন যার উপসর্গ চোখ এবং তার দৃষ্টির মাধ্যমে জানা যায়। যেমন, তৃতীয় স্নায়ুর বৈকল্য, রক্তের বিভিন্ন রোগ, বিষক্রিয়া এগুলো কিন্তু চোখের দৃষ্টি দেখেই বোঝা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :