আশিক রহমান : সৌম্য সরকার লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২৩ এপ্রিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিরুদ্ধে ২০৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। এর একদিন আগে, ২২ এপ্রিল করেছিলেন অনবদ্য এক সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান অনেকদিন ধরেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছিলেন না। না ঘরোয়া লিগে, না আন্তর্জাতিক ম্যাচে। যে সৌম্যকে মানুষ চেনে ২০১৫ সালের বিশ^কাপ থেকে। ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ^কাপে তার নৈপুণ্য অনেকেরই নজর কেড়েছিলো। বড় কোনো ইনিংস খেলতে না পারলেও পঞ্চাশ বা তার কাছাকাছি ইনিংসগুলো সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়েছিলো। অনেকে তখন বলেছিলেন, সৌম্য বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সম্পদ। ভুল যে কিছু তারা বলেননি তার প্রমাণ দিয়েছিলেন ২০১৫ সালের বিশ^কাপের পর দেশের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার ওই তিনটি সিরিজ জয়ের পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
বাংলাদেশ তখন একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনারকেই পেয়েছিলো। কিন্তু ওই তিনটি সিরিজের পর সৌম্য তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। তার কাছে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো, যে মাপের ব্যাটসম্যান তিনি সে অনুযায়ী নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন খুব কমই। তবুও মাঝেমধ্যে তার প্রতিভার ঝলক দেখা গেছে। কিন্তু নিয়মিত নৈপুণ্য দেখাতে না পারায় হতাশ হয়েছিলেন অনেক ক্রিকেট ভক্ত। কিন্তু আস্থা রেখেছিলেন নির্বাচকেরা। সৌম্য অনেক সুযোগ পাচ্ছেনÑএমন সমালোচনাও হয়েছে বারবার। সৌম্যের নৈপুণ্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেট ভক্তরা তার ক্ল্যাসিক ব্যাটিং দেখার অপেক্ষায় থাকে সবসময়। একটা শঙ্কাও দর্শকের মনে উঁকি দিতোÑআফতাব আহমেদের মতো হারিয়ে যাবেন না তো সৌম্য? অনেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন আফতাব আহমেদও, কিন্তু তিনি হারিয়ে গেছেন। তার এই হারিয়ে যাওয়ার কারণ শুধু কী নিজে ছিলেন, নাকি অবহেলার শিকার হয়েছিলেন, সেটা ভিন্ন বিতর্ক।
কিন্তু প্রতিভাবান আফতাবকে দেশ বেশিদিন পায়নি। আফতাবের সেবা থেকে বঞ্চিত হলেও ক্ল্যাসিক ক্রিকেট ভক্তরা সৌম্যের সেবা অনেকদিন আশা করে বাংলাদেশের পক্ষে। সৌম্য কতোটা সেবা দিতে পারবেন দেশকে, সেটা দেখার বিষয়।
২০১৯ বিশ^কাপ খুব কাছে। বলা হচ্ছে ২০১৯ সালের দলটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো দল। এ দলটির সম্ভাবনা অনেক। ফেমিফাইনাল খেলাও তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। এই আত্মবিশ^াস জন্মেছে ক্রিকেটারদের নৈপুণ্য, ২০১৫ সালের বিশ^কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার সফলতা রয়েছে বাংলাদেশের, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে সেমিফাইনালও খেলে দলটি। এই বিশ^কাপে সফলতা পেতে দল হয়ে খেলতে হবে টাইগারদের, এটা যেমন জানা কথা। এই কথাও সত্যÑতামিম, সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখাতে হবে। মোস্তাফিজকে দেখাতে হবে তার জাদু। বিশেষ করে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সৌম্যের ধারাবাহিক নৈপুণ্য অনেক বেশি দরকার। কারণ সৌম্য সরকার এমন একজন খেলোয়াড় যিনি একাই একটা ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। তিনি একজন গেম চেঞ্জার। সৌম্য তার সামর্থ্য মাঠে প্রয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশকে স্বপ্নপূরণ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না।
লেখক : সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :