শিরোনাম
◈ নগর ভবন ছেড়ে এবার মৎস্য ভবনের সামনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান ◈ ২০২৪ সালে শেনজেন ভিসা প্রত্যাখ্যানে শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ ◈ টেমসসাইড কাউন্সিলে ইতিহাস গড়লেন শিবলী আলম, প্রথম বাংলাদেশি নারী মেয়র হিসেবে শপথ ◈ ইশরাককে শপথ না দিলে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি, নাগরিক সেবা বন্ধের আল্টিমেটাম আন্দোলনকারীদের ◈ পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে একের পর এক গ্রেফতার ভারতে ◈ একটা গুলি আমাগো জীবন তছনছ কইরা দিলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ আরমানের ছেলে-মেয়ের ঠাঁই হলো এতিমখানায় ◈ গাজায় মানবিক বিপর্যয়; সহজ সমীকরণে আমেরিকার অবস্থান কোথায়? ◈ আমি নিজেও সমালোচনার শিকার হয়েছি এটি করতে গিয়ে? কিন্তু আমার আর কোনও উপায় ছিলো না: ইশরাক ◈ ‌লিও‌নেল মে‌সি সর্বকালের সেরা ফুটবলার, তালিকায় সেরা দশে আছেন যারা ◈ তিনজনকে থানা থেকে ছাড়ানোর ঘটনায় হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিল এনসিপি

প্রকাশিত : ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০১:৫৫ রাত
আপডেট : ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০১:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডারউইনের ১০০০ বছর আগে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দিয়েছিলেন মুসলিম দার্শনিক আল-জাহিজ

আমিন মুনশি : আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব। তার এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বটি আমাদের পৃথিবীর পশুপাখি ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে বুঝতে বড়ো ধরনের ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু চার্লস ডারউইনের আগে ইসলামিক বিশ্বেও বিবর্তনবাদ তত্ত্বের আরো একজন প্রবক্তা ছিলেন। প্রায় এক হাজার বছর আগে ইরাকে একজন মুসলিম দার্শনিক ছিলেন যিনি প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাণীকুলের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে তার উপর একটি বই লিখেছিলেন। (সূত্র : বিবিসি বাংলা)

এই দার্শনিকের নাম ছিল আল-জাহিজ। যে পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটে তিনি তার নাম দিয়েছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন। তার আসল নাম ছিল আবু উসমান আমর বাহার আলকানানি আল-বাসরি, তবে ইতিহাসে তিনি আল জাহিজ নামেই বেশি পরিচিত। তার এই নামের অর্থ এমন একজন ব্যক্তি যার চোখের মণি বেরিয়ে আসছে। এরকম অর্থের কারণে কাউকে এই নামে ডাকা হয়তো শোভন নয়, কিন্তু এই আল-জাহিজ নামটিই বিখ্যাত হয়ে আছে তারই লেখা প্রজনন সংক্রান্ত একটি বই-এর কারণে। গ্রন্থটির নাম কিতাব আল-হায়ওয়ান অর্থাৎ প্রাণীদের বিষয়ে বই। তার জন্ম হয়েছিল ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে, দক্ষিণ ইরাকের বাসরা শহরে, মুতাজিলাহ আন্দোলনের সময়। এসময় ধর্মতাত্ত্বিক কিছু মতবাদ জনপ্রিয় হচ্ছিল যেখানে মানুষের যুক্তির চর্চার উপর জোর দেওয়া হচ্ছিল।

তখন ছিল আব্বাসীয় খেলাফত বা শাসনের চরম সময়। সেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক বই গ্রিক ভাষা থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হতো। জোরালো বিতর্ক হতো ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শন বিষয়ে। এসবের কেন্দ্র ছিল বসরা শহর। এসব আলোচনা থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল আল-জাহিজের চিন্তাধারা। চীনা বনিকেরা ততদিনে ইরাকে কাগজের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন তত্ত্ব লিখিত আকারে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। তরুণ আল-জাহিজ তখন নানা বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন। যেসব বিষয়ে তার খুব বেশি আগ্রহী ছিল সেগুলোর মধ্যে ছিল বিজ্ঞান, ভূগোল, দর্শন, আরবি ব্যাকরণ এবং সাহিত্য।

ধারণা করা হয়, তার জীবদ্দশাতেই তিনি দুশোর মতো বই প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ এই আধুনিক কাল পর্যন্তও টিকে রয়েছে। তার বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে দ্য বুক অফ অ্যানিমেলস বা প্রাণী বিষয়ক বইটি। এটি একটি এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো, যাতে সাড়ে তিনশো প্রাণীর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটিতে তিনি এমন কিছু ধারণা তুলে ধরেছেন যার সাথে আধুনিক কালের বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদে তত্ত্বের সাথে চমকপ্রদ অনেক মিল পাওয়া যায়।

আল-জাহিজ তার বইতে লিখেছেন, ‘টিকে থাকার জন্যে প্রাণীদেরকে লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্যেও, এবং তারা নিজেরাই যাতে অপরের খাদ্য না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করার জন্যে। এমনকি, প্রজননের জন্যেও তাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়।’ ‘নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশের নানা কারণে প্রাণীরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এভাবেই তারা নতুন নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘যেসব প্রাণী প্রজনন ঘটাতে টিকে থাকতে পারে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে।’ আল-জাহিজের কাছে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল যে এসব প্রাণীকুলকে টিকে থাকার জন্যে অনবরত সংগ্রাম করতে হয়। এবং একটি প্রজাতি সবসময়ই আরেকটি প্রজাতির চেয়ে শক্তিশালী। টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াই-এ প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়। এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়।

আল-জাহিজের এসব ধারণা তার পরবর্তী অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আল-ফারাবি, আল-আরাবি, আল বিরুনী এবং ইবনে খালদুন। পাকিস্তানের ‘আধ্যাত্মিক পিতা’ মোহাম্মদ ইকবাল, যিনি আল্লামা ইকবাল নামেই অনেক বেশি পরিচিত তিনিও আল জাহিজের এসব তত্ত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত তার বক্তব্যের একটি সঙ্কলনে তিনি বলেছিলেন, আল-জাহিজ দেখিয়ে দিয়েছেন অভিবাসন এবং পরিবেশে পরিবর্তনের কারণে প্রাণীদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়