কামরুল হাসান মামুন : ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালের ভাবনাটা আমার জন্য আমার সহকর্মী রাকিবই ভেবে ফেলেছেন। তাই তার লেখাটিই কাট-পেস্ট করলাম। ‘বের্লিনের একটি চৌরাস্তা। পশ্চিম বের্লিনের শার্লোটেনবুর্গ এলাকায় আমরা যে বাসায় থাকতাম তার সাথে লাগোয়া চৌরাস্তা এটি। প্রখ্যাত দার্শনিক ও গণিতবিদ, ক্যালকুলাসের সহউদ্ভাবক লাইবনিৎস এর নামে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রাস্তা লাইবনিৎসষ্ট্রাসে। অন্যটি জার্মান কবি, নাট্যকার ও গ্যূটের ঘনিষ্ঠ সহচর শিলার এর নামবাহী শিলারষ্ট্রাসে। সৃষ্টিশীল ও সমাজে ভালো পরিবর্তন এনেছিলেন এমন মানুষের নামে রাস্তার নামকরণ জার্মানিতে চোখে পড়ার মতো। জার্মান জাতি জানে এ ধরনের মানুষকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আর এ কারণেই এতো সৃষ্টিশীল মানুষের জন্মও হয় সেখানে। এ প্রসঙ্গে শুধু একটি শব্দের কথা বলি। শব্দটি ‘ভিসেনশাফটলার’, জার্মান ভাষায় যার অর্থ বিজ্ঞানী। কিন্তু দুটি ভাষার দুটি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দেখতে গেলে পার্থক্য পরিষ্কার। ভিসেনশাফটলার মানে হলো জ্ঞানের ¯্রষ্টা, আর বিজ্ঞানী অর্থ বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী। একজন ¯্রষ্টার আসনে আসীন, ¯্রষ্টার মতো সম্মান তার। আরেকজন শুধু বিশেষ জ্ঞান-ই অর্জন করেছে, আদপে তার অনেক দুর্বলতার বেশি কিছু নয়। মাঝি ও প-িতের বাংলা গল্পটি একটি উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। এ ধরনের গল্প জার্মান ভাষায় নেই, কারণ গল্প আসলে সমাজের চিন্তাচেতনার-ই প্রতিচ্ছবি। জার্মানিতে সৃষ্টিশীল মানুষরা জন্মেছে, জন্মাচ্ছে ও জন্মাবে। আর এদেশে তেমন হবে না, যদি না সমাজে কোনো পরিবর্তন আসে।’ আমিও বার্লিন শহরে ছয় মাস ভাষা শেখার জন্য এবং পোস্ট-ডকের জন্য পোটসডামে প্রায় দেড় বছর কাটিয়েছি। এই জাতি অসম্ভব জ্ঞানপ্রেমী মানুষ। জ্ঞানী মানুষদের অসম্ভব সম্মান করে। দুঃখের বিষয় হলো একসময় আমরা কিছুটা এ রকম ছিলাম বটে, কিন্তু গত ৩০-৪০ বছর করাপটেড নেতানেত্রীরা দেশটিকে আরো জ্ঞানপ্রেমী বানানোর পরিবর্তে দুর্নীতিবাজপ্রেমী বানিয়ে ফেলেছে। এখন কোনো বাবার একটি সন্তান যদি ব্রো দলের বড় মাস্তান হতে পারে তাহলে বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী সকলে তাকে প্রায় দেবতার আসনে বসিয়ে ফেলে। পাড়ার ভালো ছেলেটিকে গোবেচারা বলদ ভাবে। আগে প্রাইমারির শিক্ষক যিরি কিনা ধুলামাখা ছেড়া পাঞ্জাবি পরে চলতেন তাকে দেখেও মানুষ সৎ ভেবে, ভালো মানুষ ভেবে সম্মান করতো। দূর থেকে বলতো লোকটা আর যাই হোক অনেক জানেন। তাকে দেখে অনেকে ঈর্ষাও করতো। কিন্তু এখন দিন পাল্টে গেছে। এখন কী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আর কী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের সবাইকে এখন আলতা-লিপস্টিক ফেরিওয়ালার মতো সত্যিকার অর্থে কেবল একেকজন জ্ঞানের ফেরিওয়ালা ভাবেন যারা টাকার বিনিময়ে জ্ঞান ফেরি করে বেড়ান। সরকারকে ভাবতে হবে যে শিক্ষকদের এমন বেতন দেয়া হবে যেন তারা জ্ঞানের ফেরিওয়ালা না হয়ে জ্ঞানের ¯্রষ্টা (বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে) এবং বিতরণকারী হন।
শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন একটি ারপরড়ঁং স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে যেন সৎ মানুষও এখানে এসে অসৎ হতে বাধ্য হয়। এজন্য কে দায়ী আর কে দায়ী নয় এই আলোচনায় গেলে এর কোনো সুরাহা পাওয়া যাবে না। তবে শুরুটা করতে হবে নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে। শুরুটা করতে হবে বেতন স্ট্রাকচার এমন করা যাতে এহঃ শিক্ষকদের কোনো পার্ট-টাইম করার চিন্তাও না আসে। শিক্ষকদের মিল কারখানার কর্মীদের মতো ঃৎবধঃ করলে তাদের দিয়ে সৃষ্টিশীল ভালো কাজ হবে না। শিক্ষকতাই এমন একটি চাকরি যেই চাকরিতে ৯টা-৫টা করা যাবে না। আমরা ভোরে উঠে কাজ করি, মধ্য রাত জেগে কাজ করি। এই কাজ সময় বেঁধে দিয়ে হয় না। ফেসবুক থেকে