তরিকুল ইসলাম : রোহিঙ্গা সংকটে রাজনৈতিক সমাধানে জোর দিলেন বাংলাদেশ সফররত ইউনিসেফ এর প্রধান নির্বাহী হেনরিয়েটা এইচ ফোর। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরতে বুধবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হেটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নিয়ে চেস্টা চালাচ্ছে। সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সমাধানের বিকল্প দেখছেন না বলেও যোগ করেন।
ইউনিসেফ এর প্রধান নির্বাহী বলেন, কক্সবাজারে অবস্থানরত ৫লাখ রোহিঙ্গা শিশু রাষ্ট্রহীন শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে। তাদের ভবিষৎ নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, হতাশা ও নৈরাজ্যর ঝুঁকিতে রয়েছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বৈশ্বিক সমাজ হিসেবে আমাদেরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী বিশ্ব ‘রাষ্ট্রহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছে তাদের নিজেদের সুন্দর জীবন গঠনে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন।
হেনরিয়েটা এইচ ফোর বলেন, বিশ্বের সব চেয়ে বড় এবং জরবহুল শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত এই রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টেকসই কোনো সমাধান দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না। মিয়ানারে তাদের কোনো আইনি পরিচয় বা নাগরিত্ব নেই। বাংলাদেশেও জন্মগ্রহণ করা শিশুদের নিবন্ধন করা হচ্ছে না। তাদের বৈধ কোনো পরিচয় ও স্মরণার্থীর মর্জাদা নেই। সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গারা তাদের কমিউনিটি এবং বিশ্বের কাছে সম্পদ হতে পারে।
এসময় জাতিসংঘের মহাসচিবের মানবিক দূত আহমেদ আল মেরাইখি বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমানে আইনি পরিচয় ব্যাতীত তারা পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অনুকম্পায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আরো সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জরুরি সহায়তা দিতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের ২৯ শতাংশ পেয়েছে সংস্থাটি।
চারদিনের সফরে ইউনিসেফ এর প্রধান নির্বাহী ও জাতিসংঘের মহাসচিবের মানবিক দূত সোমবার ঢাকায় এসেই চলে যান কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিবিরে। কথা বলেন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে। শোনেন তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা। কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন কালে ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টারও ঘুরে দেখেছেন হেনরিয়েটার। আর এ নিয়েই ছিলো ইউনিসেফের সংবাদ সম্মেলন। গত ৩০ বছরে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফর করছেন বৈশ্বিক শিশু সংস্থার কোনো প্রধান নির্বাহী। বাংলাদেশ সফরের আগে চলতি বছরের শুরুতেই ইউনিসেফ প্রধান নির্বাহী হেনরিয়েটা মিয়ানমার সফর করেন।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিতে দুই কোটি ৮২ লাখ ডলার অনুদান চেয়েছিল ইউনিসেফ। সেখানে এখন পর্যন্ত ওই অর্থের অর্ধেকের সামান্য বেশি এসেছে। এসব শিশুর জন্য গত জুলাই নাগাদ এক হাজার ২০০ শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার শিশু ভর্তি হয়েছে। তবে এখনো সেখানে কোনো স্বীকৃত পাঠ্যসূচি চালু হয়নি৷ ক্লাসরুমগুলোতে গাদাগাদি করে বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।