শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৫:২৯ সকাল
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৫:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদেশে স্থায়ীভাবে যারা বসবাস করতে চায়, তাদের আগে ঠিক করতে হবে সেই দেশকে তারা ভালোবাসতে পারবে কিনা

কামরুল হাসান মামুন

বাংলাদেশ এখন মাঝে মাঝেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়। যদিও খুব ভালো সংবাদের শিরোনাম খুব কম সময়ই হয়। অনেক বাংলাদেশি এখন ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে এক, দুই এমনকি তিন জেনারেশন ধরেও বসবাস করছেন। এই যে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে বসবাস করছেন তার কারণ কী? এর মুখ্য কারণ অর্থনীতি। নিজ জীবনের একটি অংশ দুঃখকষ্টে বাংলাদেশে কাটলেও সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে অনেকেই ওইসব দেশে চলে গেছেন। এদের জীবনটা বেশ অদ্ভুত। আপন মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য দেশে জীবনের বাকি অংশ কাটানো এতো সহজ নয়।

যারা সিলেটে থেকেছেন তারা জানেন সিলেটের অনেকেই ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। প্রথম জেনারেশনের যারা ওখানে গিয়ে থেকেছেন তারা দেশকে ভুলতে পারেনি বা পারে না। অসাধারণ এক নস্টালজিয়ায় ভুগে তারা জীবনানীপাত করেন। লন্ডনে আমি বাংলাদেশি মালিকের অনেক মুদি দোকান দেখেছি যেখানে তিব্বত কদুর তেল, তিব্বত স্নো, মুড়ি, শুঁটকি, পটল, ইলিশ মাছ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ওখানে এতো দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের তিব্বত কদুর তেল আর তিব্বত স্নো ব্যবহার করতে হবে? উত্তরটা এতো সহজ নয়। এটা কম দাম আর বেশি দামের বিষয় নয়।

সিলেট ঘুরলে দেখবেন অজপাড়াগাঁয়ে সুন্দর সুন্দর দালানকোঠা। এসব বাসায় বছরের পর বছর ধরে একজন কেয়ারটেকার থাকে বাড়ির দেখভাল করার জন্য। মালিক হয়তো দুই-তিন বছরে একবার কিংবা বড়জোর দুইবার আসেন। কিন্তু স্বপ্ন দেখেন তিনি নিজে এবং পারলে ছেলেমেয়েরাও একদিন দেশে চলে আসবেন। সুন্দর বাড়ি বানানোর একটি বড় কারণ হলো তিনি যে এখন ধনী হয়েছেন, তিনি যে এখন সুখে আছেন, তার যে অনেক টাকা আছে সেটা দেশের পাড়া-প্রতিবেশীরা না জানলে এই সুখের কোনো মূল্য নেই। তাই ওখানে রেস্টুরেন্টে বাসুন মাজলে বা পেঁয়াজ কাটলে অথবা ওয়েটার বা খাদ্য পরিবেশক হলেও ক্ষতি নেই, কারণ দেশের মানুষ তো দেখছে না। ওরা ওখানে কম খেয়ে আর কম পরে হলেও টাকা জমিয়ে একটি সুন্দর বাড়ি বানায়। তাদের মনে হয়তো একটি সুপ্ত বাসনা কাজ করে। সেটা হলো একদিন তাদের সন্তানরা নিজ দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু সন্তানরা তো বাংলাদেশি নয়। সন্তানদের সন্তানরা তো আরো বেশি নয়। তাই কোনোদিন তাদের আর ফিরে আসা হবে না। বরং তাদের উচিত হোস্ট দেশের সাথে মিশে গিয়ে পড়াশোনায় ভালো করে ওই সমাজে ভালোভাবে বেঁচে থাকা। এতেও দেশের লাভ। তারা ভালো করলে কিছুটা কৃতিত্ব বাংলাদেশ এমনিতেই পাবে।

আর তাদের দৈনন্দিন জীবনটা কেমন? এরা ইউরোপ কিংবা লন্ডনে থাকে বাংলাদেশি হয়ে। এরা নিজেরা মিলে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ বানিয়ে নিজেদের মতো করে এক টুকরা বাংলাদেশ বানিয়ে তারা বিদেশে থাকে। এরা একে অন্যের বাসায় দাওয়াত দেয়াদেয়ি করে আর জটলা পাকিয়ে দেশের রাজনীতি আর ধর্মনীতি আওলায়। যেই জন্য দেখা যায় ওই সব দেশের সবগুলো শহরেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি কমিটি আছে। বিশ্বের আর কোনো দেশের ইমিগ্রান্টদের মাঝে এটা তেমন দেখা যায় না। এমনকি ইন্ডিয়া-পাকিস্তানিদের মাঝে পর্যন্ত আমি এটা দেখিনি যেটা বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখি। বাংলাদেশি যারা বিদেশে স্থায়ীভাবে থাকে তাদের মধ্যে আরো কিছু জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি। এরা দেশে যতোটা না ধার্মিক ছিলো বিদেশে গিয়ে আরো বড় ধার্মিক হয়ে যায়। এ রকম কনজারভেটিভ হয়ে যাওয়ার একটি কারণ হয়তো তাদের সন্তানরা যাতে বিদেশি সংস্কৃতির বলয়ে পড়ে না যায়। ঘরে বেশি বেশি করে দেশীয় এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করলে সন্তানরা যদি তার ছিটেফোঁটাও পায় তাতেও খুশি। এদের অনেকেই পশ্চিমা সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে। ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের এই ঘৃণার বীজ বপন করে। অনেক ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশি স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় পড়ায়। আমি এমনও দেখেছি ৬-১০ বছরের সন্তানদের বাংলাদেশে এনে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন। এভাবে বিদেশে থাকলেও ওই দেশের নাগরিক হলেও এরা ঠিক  ওই দেশের মানুষ হয়ে ওঠে না। একসময় এদের সংখ্যা যখন কম ছিলো তখন হোস্ট দেশের মানুষরা এটাকে পাত্তা দিতো না। কিন্তু এখন এদের সংখ্যা সিগ্নিফিক্যান্টলি বেড়েছে ফলে এখন হোস্ট দেশের অনেক নাগরিক এটা আর পছন্দ করছে না। তারা তাদের নিজ দেশের সংস্কৃতি হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে মনে করে। ফলে ওই সব দেশের অনেক নাগরিক এখন এন্টিইমিগ্রান্ট হয়ে যাচ্ছে। তারই কারণে ওই সব দেশে আলট্রা ধর্মীয়ভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা ফ্যাসিস্ট মানসিকতার দলগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। ইতালিতে ইতোমধ্যে এ রকম সরকার ক্ষমতায় চলে এসেছে। এখন যারা ইতালিতে থাকে তারা জানে জীবন এখন কতো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ইমিগ্রান্টরা যতো বেশি কনজারভেটিভ হবে এবং নিজ দেশের সংস্কৃতি ইম্পোর্ট করতে চাইবে ততো বেশি এন্টিইমিগ্রান্ট মনোভাব শক্তিশালী হবে। এই যে বাংলাদেশি অনেকেই যারা ইসলামিক স্টেট নামক আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিতে সিরিয়ায় গিয়েছিলো তাদের পরিবারের ভেতরের পরিবেশ একটু ঘেঁটে দেখলেই অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। সিরিয়াতে এখন এরা প্রায় নিশ্চিহ্ন। ফলে এদের অনেকেই এখন নিজ দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু ব্রিটেন কিংবা আমেরিকা তাদের এখন তাদের দেশের নাগরিক বলে মানছে না। তাদের কী দোষ দেয়া যায়? তারা তো এদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখে। তাদের দেশে থেকে, তাদের দেশের ট্যাক্স পেয়ারের টাকায় তৈরি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তাদের সংস্কৃতি এবং তাদের নাগরিকদের শত্রু ভেবে মেরে ফেলার দীক্ষা নিলে তারা কেন আবার তাদের নিবে?

আমাদের যারা বিদেশে যাবে, বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে তাদের আগে ঠিক করতে হবে যেই দেশের নাগরিক তারা হতে চায় সেই দেশকে তারা ভালোবাসতে পারবে কিনা, তাদের আগে ঠিক করতে হবে যেই দেশের নাগরিক তারা হতে চায় সেই দেশের সংস্কৃতি তারা পছন্দ করে কিনা। তাদের আগে ঠিক করতে হবে যেই দেশের নাগরিক তারা তাদের সন্তানদের ওই দেশের ওই বয়সের ছেলেমেয়েরা যেইভাবে বড় হয় সেইভাবে বড় হতে দিবে কিনা। যদি না পারেন নিজ দেশে থাকুন। নিজ দেশে থেকে নিজ দেশকে আপনার স্বপ্নের দেশ বানান। আসুন আমরা আমাদের বাংলাদেশকেই এমন দেশ বানাই যাতে কেউ আর অন্য দেশে চলে যেতে চাইবে না। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়