সৌরভ নূর : বস্তিতে বসবাসকারী নাগরিকরা কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে যখন নিজেকে গুছিয়ে তোলে, সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ঘরের কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিজেকে একটু সমৃদ্ধ ভাবতে শুরু করে তখনই নেমে আসে কোনো না কোনো বিপর্যয়। অগ্নিকা- তেমনই এক বিভীষিকার নাম বস্তিবাসীদের কাছে। দেখা যায় স্বল্প সময়ের অগ্নিকা-ে রাতারাতি অনেকেই হয়ে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন। মাঝে মধ্যেই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায় রাজধানীসহ সারাদেশে। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সেই বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে চট্টগ্রামের চক্তাই এলাকার এক বস্তিতে। এক রাতের অগ্নিকা-ে সর্বহারা হয়ে গেছে শত শত পরিবার। বীভৎসভাবে পুড়ে মরেছে অনেকেই। অপরিকল্পত গৃহায়নের ফলে সৃষ্ট অগ্নিকা-ে জান ও মালের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার দায়ভার কে নেবে?
এ রকম পরিস্থিতির দায়ভার ও তাদের সহযোগিতায় করণীয় প্রসঙ্গে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এ ধরনের বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে প্রাথমিকভাবে তিনভাবে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। প্রথমত দ্রুত তাদের খাবার নিশ্চিত করতে হবে, দুই. তাদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করতে হবে, তৃতীয়ত. সহায়-সম্বল হারিয়ে মানসিকভাবে মুষড়ে পড়া মানুষগুলোর পাশে রাষ্ট্রের দাঁড়ানো উচিত। প্রাথমিভাবে এই উদ্যোগ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এরপর সরকার তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে স্বাভাবিকভাবে এটাই হওয়া উচিত এবং দায়ভারও তাদেরই নিতে হবে। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রাজেকুজ্জামান রতন এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সব শহরের পাশেই একটি বা একাধিক বস্তি রয়েছে। শহর তৈরিতে এই নি¤œ শ্রেণির মানুষের ভূমিকা কম নয়। কিন্তু রাষ্ট্র বা সমাজ সেসব অসহায় মানুষের কথা ভাবতে চায় না। তারা উক্ত শহরের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও কখনো সরকারি জমিতে, কখনো নর্দমার পাশে বস্তি তৈরি করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। অন্যদিকে প্রায়ই অগ্নিকা-ের ফলে তাদের হাহাকার শোনা যায় এবং বস্তি ফাঁকা হয়ে গেলে ক্ষমতাবানরা সেই জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এক কথায় শহরটাকে যারা টিকিয়ে রাখে তাদের টিকিয়ে রাখা রাষ্ট্রের কাছে খুব কঠিন হয়ে পড়েছে সিটি কর্পোরেশনও তাদের কথা কতোটুকু ভাবে? সেটা অট্টালিকা দিয়ে আড়াল করে রাখা বস্তির দিকে তাকালে বোঝা যায়। ন্যূনতম হলেও রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের জন্য কিছু করা। বাসদের পক্ষ থেকে আমরা একটি গবেষণা করে দেখেছিলাম সরকারি খাস জমিগুলোকে দখলমুক্ত করে যদি ছোট ছোট বহুতল ভবন নির্মাণ করা যায় তাহলে এই নি¤œ আয়ের মানুষদের একটি স্থায়ী মাথা গোঁজার ঠিকানা হয় এবং সরকার যে টাকা বিনিয়োগ করবে সেটা তাদের কাছ থেকে বস্তি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা বিশ বছর ভাড়া বাবদ আদায় করলে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব। বস্তি উচ্ছেদ না করে তাদের নির্দিষ্ট আবাসনের দায়ভার রাষ্ট্র এবং সিটি কর্পোরেশনকেই নিতে হবে।