শিরোনাম
◈ রুমিন ফারহানাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যা বললেন আরজে কিবরিয়া ◈ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের ওপর ডাকাত দলের হামলা, গোলাগুলি ◈ কাপাসিয়ার কামারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়: বিনা ছুটিতে আমেরিকা বসে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ◈ চীনের বাঁধে ভারতের পানিঝুঁকি, বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা প্রশমণে ভারতের লবিং ফার্ম নিয়োগ  ◈ বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কের স্থায়িত্বে প্রয়োজন ক্ষমা প্রার্থনা: বিশেষজ্ঞদের মত ◈ ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১২ ◈ ‌‌‌'আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ন..গ্ন ভিডিও করে রেখে দিতেন তৌহিদ আফ্রিদি' (ভিডিও) ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশের ◈ কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হার্ট অ্যাটাক

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:০০ রাত
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে শেখ হাসিনার সঙ্গে ওয়াজেদ মিয়ার বিয়ে হয়েছিলো, বললেন ড. অজয় রায়

লিয়ন মীর : বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার আজ ১৬ ফেব্রুয়ারী জন্মদিন উপলক্ষে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ওয়াজেদ মিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায় বলেছেন, ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র এবং রাজনৈতিক সচেতন। রাজনৈতিক সচেতনার কারণেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ওয়াজেদ মিয়ার পরিচয় হয় এবং পর্যায়ক্রমে দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠে। শেখ সাহেব ওয়াজেদ মিয়াকে খুব পছন্দ করতেন। ১৯৬৭ সালে শেখ সাহেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. ওয়াজেদ অনেকটা হঠাৎ করেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শেখ সাহেব তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে বন্দি। শেখ সাহেব কারাগারে বন্দি থাকায়, তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. ওয়াজেদ মিয়ার বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়েছিলো। জেলগেটের সেই বিয়েটি ছিলো অতিসাধারণ। শুধু কাগজ-কলমের বিয়ে। পরর্বতী সময়ে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হলে বড় আয়োজনে অনুষ্ঠান করা হয়েছিলো। সেই অনুষ্ঠানে আমিও অংশ নিয়েছিলাম।

অজয় রায় বলেন, অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন ষাটের দশকের গোড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যায় আমার শিক্ষকতা জীবনের প্রথমদিকের ছাত্র। অনার্স ও এমএসসি দুটিতেই তিনি প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন। পাস করার পরপরই ১৯৬৩ সালে ঢাকায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত আণবিক শক্তি কেন্দ্রে জুনিয়র বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন ওয়াজেদ মিয়া। সম্ভবত পরের বছরই কমিশনের বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে চলে যান উচ্চ শিক্ষার্থে। ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে ডিআইসি করে লন্ডনের কোনো একটি কলেজ থেকে তাত্ত্বিক নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করে ১৯৬৭ সালের শেষদিকে দেশে ফিরে ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এ সময় ১৯৬৮-৬৯-এর গণআন্দোলন শুরু হয়ে গেছে, স্বাধীকার ও স্বায়ত্তশাসন, ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি এবং সর্বোপরি শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করার আন্দোলন। কেমন করে জানি এ গণআন্দোলনে আমিও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে সবদিক বজায় রেখেই ওয়াজেদ মিয়া গোপনে এ আন্দোলনের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে থাকেন। কমিশনের বিজ্ঞানীদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি।

ওয়াজেদ মিয়ার এই শিক্ষক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরো বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকেই ওয়াজেদ ছিলেন রাজনীতি সচেতন ও ভালো সংগঠক। ১৯৬১ সালে তিনি ফজলুল হক হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে সম্ভবত ওই সময় থেকে শেখ মুজিবের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস শেখ পরিবারের সঙ্গে ওয়াজেদকেও অবরুদ্ধ ঢাকায় বন্দি জীবনযাপন করতে হয়েছিলো। একটি ঘটনা বলতে চাই- আমার যতোদূর মনে পড়ে দিনটি ছিল মার্চের ৩০ বা ৩১। পাক আর্মির ভয়ে আত্মগোপন করে ইস্কাটনে আমার এক ছাত্রের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাদ্ধ্য আইন আবার জারি হবে তাই সিগারেট কিনতে এক গলির দোকানে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানেই অপ্রত্যাশিতভাবে ওয়াজেদের সঙ্গে দেখা। দু’জন দু’জনকে দেখে ভূত দেখার মতো অবস্থা। ‘স্যার, আপনি এখানে?’ আমার হতভম্ব প্রতিত্রিক্রয়া, ‘ওয়াজেদ, তুমি?’ সেও সিগারেট কিনতে বেরিয়েছিলো। কাছেই শেখ হাসিনাকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, সঙ্গে নবজাতক জয়। দু’জনই দু’জনকে সাবধান করে বললাম, ‘এভাবে বের হওয়াটা ঠিক হয়নি।’ জোর করে বাসায় নিয়ে গেলো, বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনাকে দেখে যাবেন না? সপ্রতিভ কিশোরী হাসিনা ও জয়কে দেখে দ্রুত ফিরে এলাম, কারণ কারফিউ সমাগত। সে দিনই শেখ হাসিনাকে প্রথম দেখলাম।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যাকান্ডের সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়া একটি গবেষণা ফেলোশিপের কাজে জার্মানিতে অবস্থান করছিলো। ফলে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে তারা বেঁচে যান। পরে ওয়াজেদ শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের দিল্লি�তে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশে তখন বৈরী পরিবেশ শেখ পরিবারের জন্য। ভারত সরকারের এই বদান্যতার কথা ওয়াজেদ একাধিকবার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমার কাছে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, সফল গবেষকের পাশাপাশি ড. ওয়াজেদ ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ পদার্থবিদ্যা সমিতি ও পেশাজীবী বিজ্ঞানীদের সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলো। এছাড়া অনেক জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত থেকেছেন। নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে তার যথেষ্ঠ পরিচিতি ছিলো। যতদুর জানি, নিউক্লিয়াসের গড়ন ও নিউক্লীয় বর্ণালি বিষয় ছিল তার গবেষণার বিষয়। কর্মজীবনে গবেষণার পাশাপাশি তিনি প্রথমে ঢাকা আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পরিচালক এবং পরে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এ পদে থেকেই তিনি ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন ৫৭ বছর বয়সে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়