শিরোনাম
◈ হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন ◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান ◈ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে: ওবায়দুল কাদের ◈ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শেষ, এখন চলবে ফাইজার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৩ দুপুর
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তিন দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সাভারের ফুল চাষীরা

এম.এ হালিম, সাভার: ফুলকে ভালবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। জন্মদিন থেকে মৃত্যুদিনে সর্বত্র ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ফুলের ব্যবহার হয়। এর সুবাস এবং সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। রাজধানীর মিরপুর রেবিবাধ সংলগ্ন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়টি এখন গোলাপ গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

কৃষি নির্ভর এ ইউনিয়নটির বেশীর ভাগ লোকই বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সবজী চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ত্রিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে ইউনিয়নটির কালিয়াকৈর, বাগ্নিবাড়ি, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া ও শ্যামপুরসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বছর জুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করে স্থানীয়রা।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেনের একজন গবেষক সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের মৈস্তাপাড়া গ্রামে পরীক্ষা মূলক ভাবে মেরেন্ডি ফুলের বীজ বপন করেন। এখানকার মাটি ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় গোলাপ চাষে সাফল্য আসে। এরপর থেকেই সাভারে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ফুলের চাষ বাড়তে থাকে।

ফুল চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানকার বাজার গুলোতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাহিদা বেশী থাকে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া ফুলের দাম ভালো থাকায় দিন-রাত পরিশ্রম করেও কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠে। বর্তমানে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল চাষীরা।

চাহিদা বৃদ্ধি ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে গোলাপ চাষীর সংখ্যা। দুই শতাধিক ফুল চাষী কৃষিকাজের বদলে গোলাপ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। রাজধানীর বিখ্যাত ফুলের বাজার শাহবাগ ছাড়াও এখানকার আকর্ষণীয় গোলাপের চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সাড়া বছর জুড়ে গোলাপের চাহিদা থাকলেও বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়।

ফুল চাষী মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে মিরিন্ডা গোলাপ চাষ করেছি। পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকার ফুল বিক্রি করছি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস পার হলে ফুলের বিক্রি কম হয়। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের উৎপাদিত ফুল যদি বিদেশে রপ্তানী করা যেত তাহলে ফুল চাষের মাধ্যমেও প্রচুর পরিমান বিদেশী মুদ্রা আয় করার পাশাপাশি আমাদের ভাগ্য বদলের সুযোগ হতো ।

সাভারে কৃষি কাজের পরিবর্তে অধিক লাভজনক হওয়ায় ফুল চাষে ঝুঁকছেন প্রান্তিক চাষীরা। এখানকার জমি উঁচু হওয়ায় ফসলের চেয়ে ফুল ভালো হয়। এছাড়া ফসলে যে পরিমান সময় ও শ্রম দিতে হয় ফুল চাষে তার চেয়ে অনেক কম সময় ও শ্রম লাগে। এজন্য দিন দিন সাভারে ফুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে উৎপাদিত গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিউলাস সহ বিভিন্ন ফুল বিক্রি হয় রাজধানীর শাহবাগ, আগারগাঁওসহ অন্যান্য পাইকারী ফুলবাজারে। এসব বাজারে চাহিদার অর্ধেক ফুলের যোগান আসে সাভার থেকে।

শ্যামপুর এলাকা সুরুজ মিয়া বলেন, সারা বছর ধরে গোলাপের চাষ হলেও নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলাপ ফুলের জমজমাট মওসুম থাকে। তাছাড়া ফুলের দাম বেশি থাকে ভালোবাসা দিবসে। এ সময় তিনশটি ফুলের একটি বান্ডিল বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এরপর পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনসহ বিভিন্ন দিবসেও ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বান্ডিল বিক্রি হয়। তবে অফ সিজনে বান্ডিল বিক্রি হয় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এজন্য অনেক কৃষক বিভিন্ন দিবসকে টার্গেট করে ফুলের চাষ বেশি করেন।

ফুল চাষী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আনসার মেল্লা জানান, আগে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি ফুল চাষ করলেও এখন প্রায় আড়াইশ’ হেক্টর জমিতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ ফুল চাষে নিয়োজিত। গ্রীষ্মকালে ফুলগুলো গরমে বেশি সময় রাখা যায়না পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। দিন দিন যেভাবে ফুলের চাষ বাড়ছে এবং ব্যবসা সফল হচ্ছে তা ধরে রাখার জন্য এ এলাকায় একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে এর মধ্যে প্রায় পাঁচশ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করা হয় যার সিংহ ভাগ জমিতেই গোলাপ ফুলের চাষ হয়। ব্যাপক হারে ফুল চাষ হওয়ায় এখানকার চাষিদের সরকারি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ফুল চাষীরা যে কোনো সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়