বিভুরঞ্জন সরকার : দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু এবারের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপিকে ছোট দলে পরিণত করে দিয়েছে। ছিলো বটবৃক্ষ, হয়েছে বনসাই। কিন্তু বিএনপি নেতারা বড় কথা বলা ছাড়ছেন না। খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে দেশে মারাত্মক কিছু ঘটে যাবে, মানুষ সুনামির মতো রাজপথে নেমে এসে জেলের তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে বলে বিএনপি আশা করেছিলো। বিএনপির আশা পূরণ হয়নি। এখন এক বছর পরে এসে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারার ব্যর্থতার কথা বিএনপি নেতারা স্বীকার করছেন।
বিএনপির ঝানু আইনজীবীরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করার সম্ভাবনা কম। তাহলে বিকল্প কি? রাজপথের আন্দোলন জোরদার করেই নাকি বিএনপি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে। এক বছরে যা হয়নি, কয় বছরে সেটা হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আসলে বিএনপির সামনে কোনো আশার আলো নেই। কর্মী-সমর্থকরা যেমন হতাশ, নেতা-শীর্ষ নেতারাও তেমনি হতাশ। হতাশা প্রকাশ না করে তারা বড় বড় কথা বলেন। অন্ধকার রাতে পথ চলতে গিয়ে ভূতের ভয়ে নাকি কেউ কেউ জোরে কথা বলে অথবা বেসুরে গলায় গান ধরে।
খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলাটিকে বিএনপি নেতারা মিথ্যা মামলা বলে একধরনের আনন্দ পান। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে বলে বিএনপি মনে করছে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, পাকিস্তান আমলে শেখ শেখ মুজিবুর রহমানকেও খালেদা জিয়ার মতো মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছিলো। কিসের মধ্যে কি, পান্তাভাতে ঘি। কোথায় আগরতলা, কোথায় চকির তলা!
শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মামলার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলাকে এক সারিতে এনে বিএনপি তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও অচিরেই বুঝতে পারবেন যে, শেখ মুজিবের সঙ্গে তুলনার যোগ্য নন খালেদা জিয়া। অতীতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াকে প্যারালাল নেতা বানাতে গিয়ে বিএনপি মারাত্মক ভুল করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার নাম আলোচনায় আসার কোনো কারণ নেই। এরা তখন ছিলেন রাজনীতির বাইরের মানুষ। পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনে জিয়া-খালেদার ছিঁটেফোটা অবদানও নেই। এজন্য তাদের সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা থাকা স্বাভাবিক। তাই তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের নেতাদের তুলনা করতে ভালোবাসেন, মনে মনে সুখ অনুভব করেন। কিন্তু এই তুলনা বালখিল্য। অগ্রহণযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা, তাকে কারাগারে রাখা আর খালেদা জিয়ার মামলা- জেল এক করে দেখার চেয়ে রাজনৈতিক মূঢ়তা আর কিছু হতে পারে না। খর্বাকায় বামনকে যেমন দীর্ঘকায় মানুষ বানানো যাবে না, তেমনি কোনো রাজনৈতিক বামনকে তার সঙ্গে তুলনা করে বঙ্গবন্ধুর সমান তো দূরের কথা কাছাকাছি উচ্চতায়ও নেয়া যাবে না।
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়