তাসমিয়াহ আহমেদ : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ও/এ লেভেলের শিক্ষার্থীদের সাথে এসএসসি/ এইচএসসি শিক্ষার্থীদের বৈষম্য খুঁজে বের করতে নয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট। নয় সদস্যের এই কমিটিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একজন করে সদস্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের দু’জন সদস্য রয়েছেন। চার মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যখন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়, তখন তাদের প্রশ্নপত্র জাতীয় পাঠ্যক্রমের সিলেবাস অনুযায়ী করা হয় কিনা বা তখন কোন বৈষম্য করা হয় কিনা কমিটিকে তা খতিয়ে দেখতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোন বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা তাও কমিটির কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত।
ও/এ লেভেলের শিক্ষার্থীদের যাতে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় যাতে দুই ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন বৈষম্য না থাকে, প্রতিবেদনে সেই বিষয়টি সুপারিশ করতে কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় পাঠ্যক্রম ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র নিরপেক্ষ হয় কিনা ও উভয় মাধ্যমের সিলেবাস অনুসরণ করা হয় কিনা তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার অনিক আর রহমানের দায়ের করা রিট পিটিশনের শুনানি শেষে এসব আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ।
ইংরেজি মাধ্যমের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে আমি আশা করি যে, ভর্তি যুদ্ধে আসলেই যদি কোন বৈষম্য হয়ে থাকে, তাহলে যেন সেটা দ্রুতই নিরসন করা হয়। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত এই যে, ভর্তি যুদ্ধে আসলেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষায় তাদের সমস্যা ও দক্ষতা বিবেচনা করা হয় না। অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে, একমাত্র ধনীরাই তাদের বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠায়, যা একেবারেই ভুল ধারণা। হাজারো মধ্যবিত্ত শ্রেণির ছেলেমেয়েরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে এবং তাদের মধ্যে অনেকেরই ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াশুনা করানোর সামর্থ্য নেই। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্কলারশিপের ব্যবস্থাও করতে পারে না অনেকে।
তখন ঐসব ছেলেমেয়রা হতাশায় ভুগতে থাকে। অথচ আমরা চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পড়ালেখার সুযোগ পায়। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়তে পাঠানো বাবা-মাদের জন্য একটা বাড়তি চাপও। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোকে কেন উপযুক্ত করতে পারি না? অতি দ্রুত আমাদেরকেই এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক : দৈনিক আওয়ার টাইমের নির্বাহী সম্পাদক। (মূল ইংরেজি লেখা থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)