সাত্তার আজাদ, সিলেট: সিলেটে উৎপাদিত হয় শাকসবজি ও ফলমূল। জেলার বাইরে থেকে আমদানিও করা হয়। এসব শাকসবজি ও ফলমূল বিক্রি হয় নগরীর সোবহানীঘাট কাঁচাবাজার আড়ৎসহ বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু বিক্রির জন্য নিয়ে আসা শাকসবজি ও ফলমূলের অবিক্রিত অংশ পচে নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি সংরক্ষণের অভাবে পাহাড়ি অঞ্চল সিলেটে উৎপাদিত ফলমূলও পচে যাওয়াতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যে সংরক্ষণের অভাবে বছরে সিলেটে উৎপাদিত প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কৃষিপণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি হিমাগারের ব্যবস্থা থাকলে এই ক্ষতি হত না।
সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটে শাকসবজি ও ফলমূলের সর্ববৃহৎ দুটি পাইকারি হাট। এই হাট দুটিসহ নগরীতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সবজি ও ফলমূল কেনাবেচা হয়। স্থানীয় চাষি ও ফড়িয়ারা বেশি মূল্য পাওয়ার আশায় সরাসরি পাইকারি হাটে পণ্য নিয়ে আসেন। হাটে আলু, কাচামরিচ, পুঁইশাক, লালশাক, বেগুন, পটল, ডাটা, দেঁড়স, চিচিংগা, ঝিঙা, করলা, কাকরোল, লাউ, শিম, বরবটি, আনারস, আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে ইত্যাদিসহ পিয়াজ-রসুনও বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কাচাবাজার হওয়াতে আমদানি স্থিতিশীল থাকে না। একদিন কম আবার একদিন বেশি পণ্য আমদানি হয়। একইসঙ্গে বাজারে মূল্য উঠানামা করে। বিক্রির ক্ষেত্রেও রয়েছে সমস্যা। কোনো দিন বেশি বিক্রি হয় আবার কোনো দিন কাটতি অর্ধেকের নিচে নেমে আসে। পণ্যের কাটতি কমে গেলেই বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। কাচামাল হওয়াতে একদিনের ব্যবধানে পচন দেখা দেয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা বা কোল্ডস্টোর না থাকায় অবিক্রিত পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আড়তের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন বিক্রির পর কিছু পণ্য থেকে যায়। স্থানীয় পণ্য টাটকা হওয়াতে এক-দুদিন রাখা গেলেও বাইরের পণ্য অনেক আগের সংগ্রহ করা থাকে। তাই বেশিদিন রাখা যায় না। কখনও একদিনের বেশি রাখলেই পচে যায়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে সিলেটে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দীর্ঘদিন রাখা যেত। এতে সময়ে অসময়ে তরিতরকারি বাজারজাত করা সম্ভব হত।
সিলেটের টুকরবাজারের কৃষক আয়নুল ইসলাম জানান, সিলেটে আলু চাষ কম হয়। সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন না। যে পরিমাণ উৎপাদন হয়, ঘরে রাখার পর তা-ও পচে নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করেও বাজারজাতকরণের সমস্যায় পচে নষ্ট হয়। এতে কৃষিকাজের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিন দিন কমছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আঞ্চলিক অফিসের উপ পরিচালক এম ইলিয়াস জানান, হিমাগার করা খুবই ব্যয়বহুল। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এটি করতে কেউ সাহস করেন না। সিলেটে একটি কোল্ডস্টোর থাকলে বছরে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার শাকসবজি ও ফলমূল রক্ষা করা সম্ভব হত।